কুশিয়ারায় নৌকা বাইচ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ অক্টোবর ২০১৫, ২:২১ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
মাঝি নাও ছাইড়া দে, মাঝি পাল উড়াইয়া দে কিংবা গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। আবার কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূর পঙ্খী নাও।
এসব মোহিত শব্দে গান বাঁধতেন ভাটি বাংলার কবিয়ালরা। বাউলরা এসব গানের চরণে সুর রচনা করে ভাটির এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গান গেয়ে বেড়াতেন। তখন বর্ষা এলেই গাঙে গাঙে চলতো নাও দৌড় উৎসব। চলতো শরতের শেষে আশ্বিন বেয়ে। নদী মাত্রিক সারা দেশ তখন এই উৎসবে মেতে ওঠতো। গাঁও গেরামের মানুষ তখন এনিয়ে মাতোয়ারা থাকতো।
এখন নদী ভরাট, মানুষের জীবনযাত্রার ভিন্নতা, শহরকেন্দ্রীক হয়ে ওঠা ইত্যাদি কারণে গাঁও গেরামের এসব উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে তবে একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। তাইতো একটু সুযোগ পেলে উৎসবে মেতে ওঠে। শহর ও গ্রামের মানুষ জড়ো হয় নদী, গাঙ ও হাওর পাড়ে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুশিয়ারা নদীর লঞ্চ ঘাট এলাকায় এরকম একটি নৌকা বাইচ উৎসবে মেতে ওঠেন শহর ও গ্রামের হাজার হাজার দর্শক। নদীর দুইপাড়ে হাজারো মানুষের কলরবে, হাততালিতে ভরে ওঠে প্রাঙ্গণ। সাতটি নৌকা নিয়ে বাইচের শুরু হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার বাইচ করে দর্শকদের আনন্দে মাতান মাঝি-মাল্লারা। বাইচটির আয়োজন করে হামরকোনা নৌকা বাইচ উদযাপন কমিটি।
সিলেটের জগন্নাথপুর, মৌলভীবাজারের উলুয়াইল, মেদিনীমহল, অন্তেহরী, রাজনগরের আমিরপুরের খাঁজার নৌকা শেরপুরের হামরকোনা, কাবু মিয়ার নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। তিন দফা বাইচের পর মৌলভীবাজারের অন্তেহরীর নৌকাটি প্রথম স্থান অধিকার করে পুরষ্কার জিতে নেয় একটি মোটর সাইকেল। দ্বিতীয় পুরষ্কার মেদিনীমহল ও তৃতীয় পুরষ্কার খাজার নৌকা রাজনগর। এদের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুইটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন।
স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নাজমুল হক প্রমুখ।
নৌকা বাইচ দেখতে আগত দর্শক প্রতিবছর বাইচের আয়োজন করার দাবি জানান।#