উপ-নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী মুখর মৌলভীবাজার ॥ মন্ত্রীর সহধর্মিনী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ অক্টোবর ২০১৫, ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
এখনো শুণ্য ঘোষিত হয়নি মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) সংসদীয় আসন। তার অর্থ সৈয়দ মহসীন আলী এখনও সমাজকল্যাণমন্ত্রী এবং নির্বাচিত আসনের সংসদ সদস্য রয়েছেন। কিন্তু তার কাছের মানুষ, তার হাত ধরে রাজনীতিতে আসা অনেকেই আবার তার দলের অনেকেই উপ-নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অনেকেই আবার সংবাদ সম্মেলন করে পোস্টার ছাপিয়ে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। শহরের বিভিন্নস্থানে এই পোস্টারগুলো শোভা পাচ্ছে। এছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও প্রার্থীতার চরম খবর। এদের মধ্যে আবার প্রবাসীরাও রয়েছেন।
যেনো হুমড়ী খেয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখলে মনে হয় এসুযোগ আর আসবে না। তাদের এই আচরণ দেখে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা আছে কি না সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেক ভোটার ? সেদিকেও কারো কোন খেয়াল নেই। কারণ মানুষ থাকলে একভাবে মূল্যায়ন হয় আর মারা গেলে হয় অন্যভাবে মূল্যায়ন।
প্রার্থীতা ঘোষণার প্রাক্কালে কেউ কেউ নিজেকে প্রয়াত মন্ত্রী মহসীন আলীর ঘনিষ্টজন, কেউ কেউ রাজনৈতিক গুরু, কেউ কেউ গ্রুপের আশীর্বাদপুষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি বলে প্রকাশ্যে নিজেকে জাহির করছেন। এদের মধ্যে কেউ কি কখনও ভেবেছেন যে, তাদের এই আচরণ সদ্যপ্রয়াত মহসীন আলীর পরিবারের সদস্যদের উপর কি প্রভাব পড়ছে? তবে তাদের এই আচরণ রাজনৈতিক অবক্ষয় ও নীতি-বিবর্জিত এবং বিবেকহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে।
অনেকেই আবার বলছেন যে, যদি এরা মহসীন আলীকে অন্তর থেকে ভালবাসতো, মহসীন আলীর রাজনৈতিক দর্শন, চিন্তা-চেতনা, প্রজ্ঞা মনেপ্রাণে ধারণ করতো তাহলে তারা মহসীন আলীর পরিবারের কোন সদস্যকেই এই পদে সাপোর্ট করতো। এধরনের বিভিন্ন প্রশ্নবানে বিদ্ধ হচ্ছেন মৌলভীবাজারের স্থানীয় সাংবাদিকরা এখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
সব মিলিয়ে এখন উপ-নির্বাচনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি চলছে মাঠ জুড়ে। তবে সাধারণ মানুষের কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনায় এখনও একটি নাম বারবার উঠে আসছে। তিনি হলেন সৈয়দ মহসীন আলীর সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসীন। যার আজীবন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও ভালোবাসায়ই একজন মহসীন আলী হিসেবে গড়ে তুলতে আষ্টেপৃষ্টে কাছে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়া সেই নারী। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকা সফরের সময় তার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। এখন সেই সঙ্কেত বাস্তবে রুপ নেয় কি না সেটার জন্য সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অন্তত;পক্ষে যারা মহসীন আলীকে ভালোবাসতো।
প্রার্থীতার দৌড়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, সাবেক সাংসদ ও জেলা পরিষদ মো: আজিজুর রহমান, পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিম ওরফে বি করিম, নতুন করে শোনা যাচ্ছে নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশ কমার্শিয়েল ব্যাংক এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ফরাসত আলী, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মিছবাউদ্দোজা ভেলাই, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা এম এম রহিম শহীদ, জেলা যুবলীগ সভাপতি ফজলুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক ভিপি আব্দুল মালিক তরপদার সুয়েব, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ। এই লাইন আরও দীর্ঘ হতে পারে যদি প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মিনী সায়রা মহসীন মনোনয়ন না পান।
উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী সদস্য সাইফুর রহমান বাবুলও মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। শুনা যাচ্ছে কোন ধরনের বিল বোর্ড বা প্রচারণা ছাড়াই অনেকটা নিরিবিলিই পথ হাটছেন সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত এ নেতা । বিগত পৌরসভা নির্বাচনেও সাইফুর রহমান বাবুল বর্তমান পৌরসভার মেয়র অ্যাড. ফয়জুল করিম ময়ূন এর সাথে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী কারা হতে পারেন সেই অনুসন্ধানে নেমে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে প্রয়াত মন্ত্রীকে জানতেন এবং সুনজরে দেখতেন। একারণেই তাকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পন করেন। নানা সমালোচনা ও দলীয় নীতি-নির্ধারকদের বাঁধার মুখেও তার মন্ত্রীত্ব বহাল ছিলো। এর কারণ মন্ত্রীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, সততা, প্রজ্ঞা এবং এই সময়ে আওয়ামীলীগ এর একজন নিবেদিত কর্মী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রীর একটি ‘সপ্ট কর্ণার’ রয়েছে তার পরিবার নিয়ে। তাই মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তার সুযোগ্য সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসীনই সবার অগ্রে রয়েছেন।
এই বিবেচনায় অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কর্মী দিয়ে নিজের প্রার্থীতা জনসমক্ষে প্রকাশ করছেন। দিনক্ষণ ও সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে সময়মত নিজের প্রার্থীতা প্রকাশ করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে চা স্টল, আড্ডা, আলাপ-আলোচনায় বেশি করে উঠে আসছে সৈয়দা সায়রা মহসীনের নাম। রাজনৈতিক পরিবারটি যেনো সর্বক্ষণ রাজনীতিমুখর থাকে। কারণ মহসীন আলী রাজনীতি ও মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ ছাড়া আর কিছুই জীবনে অর্জন করেন নি। তার নিজের অর্থে গড়া কোন বিত্ত-বৈভব নেই। তিনি আজীবন মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। তাই তার পরিবারের প্রতি জেলার সর্বস্তরের মানুষের একটা ঋণ রয়েছে। সেই ঋণ যেনো তার স্ত্রীর মনোনয়ন পাওয়ার মাধ্যমে কিছুটা শোধ হয় সেই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে মৌলভীবাজার-৩ আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম সাইফুর রহমানকে ৩২ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ মহসীন আলী। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় নির্বাচিত হন এবং এ বছরের ১২ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।