চা উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা
মৌলভীবাজারে চা বাগানে লাল মাকড়শা ও মশার আক্রমণ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ অক্টোবর ২০১৫, ৩:২১ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক রিপোর্ট::
চলতি মওসুমে অতিবৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানগুলোতে লাল মাকড়শা ও মশার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে এবছর চা উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন। এদিকে এমনিতেই দেশের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে সরকার ভারত থেকে চা আমদানী করছে।
অন্যদিকে চা পাতায় পোকার আক্রমণ হওয়ায় শ্রমিকরা চা পাতা কম তুলতে পারছে। তাই সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে কম মজুরী পাওয়া চা শ্রমিকদের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাগান মালিকরা আক্রান্ত পাতায় প্রয়োজনীয় কীটনাশক ছিটাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল লেবার হাউস সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯১টি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এসব চা বাগানে ঘন কুয়াশা, খরা, অনাবৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চলতি বছর এক নাগাড়ে অঝোরে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চা পাতায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ। লাল মাকড়শা ও মশার উপদ্রব এবার বেশি করে বেড়েছে। লাল মাকড়শার আক্রমণের ফলে চা পাতা লাল ও কুকড়ানো আবার কোথাও কোথাও মশা ও অন্যান্য পোকার আক্রমণের কারণে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এতে করে চা পাতা ও উত্তোলিত প্রক্রিয়াজাত পাতার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাজারে আশানুরুপ বা ভালো দাম না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাগান মালিকরা বিভিন্ন বাগানে লাল মাকড়শা দমনের জন্য ম্যাজেষ্টার ও ইনসাইট এবং মশা দমনের জন্য ক্যালেপ্সো ও মুক্তি কীটনাশক ব্যবহার করছেন। দিনে দুইবার এটি ছিটাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক গৌতম দেব পূর্বদিক ডটকমকে জানান, দিনে দুইবার ক্যালেপ্সো ও মুক্তি কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে আক্রান্ত পাতাগুলোতে। এটি অতিবৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা দুটি কারণেই হয়ে থাকে।
এদিকে বাগানগুলোতে লাল মাকড়শা ও মশার আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চা পাতা তুলতে পারছে না শ্রমিকরা। একারণে শ্রমিকরা প্রতিদিন তাদের নির্ধারিত ৩৫ কেজি চা পাতা তুলতে পারছে না। অন্যদিকে অভারটাইম করা থেকেও শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সপ্তাহান্তে তাদের মজুরীর কাঙ্ক্ষিত টাকা পাচ্ছে না। এতে করে শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জি পূর্বদিক ডটকমকে জানান, অতিদ্রুত যেনো বাগান মালিকরা বাগানের স্বাভারিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তা না হলে বাগানে শ্রমিক অসন্তোষও আসতে পারে।
এদিকে বাগান মালিকরা ও চা শ্রমিক নেতারা এ পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বছরের চাহিদানুযায়ী উৎপাদন না হলে তাদেরকেও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা বিরুপ আবহাওয়াকে দায়ী করছেন।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী পূর্বদিক ডটকমকে জানান, লাল মাকড়শা ও চা মশার উপদ্রব বিভিন্ন বাগানে লেগেছে। এতে করে আক্রান্ত চা পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং উৎপাদন অনেকাংশে ব্যাহত হয়। অতিদ্রুত বাগানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।