ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জন নারী ও শিশুর প্রাণহানী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৫, ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের সবাই নারী ও শিশু।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডে ব্যবসায়ী শামীম তালুকদারের নূরানী জর্দা কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
কারখানা মালিক শামীমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ; গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি।
ওসি বলেন, অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে সেহেরির পর কারখানার গেইট খোলার সঙ্গে সঙ্গে বহু নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করেন। এতে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নূরানী জর্দার মালিক শামীম তালুকদার প্রতি বছরের মতো এবারও জাকাত দেওয়ার কথা কয়েক দিন ধরে এলাকায় মাইকে প্রচার করেন। ওই খবর শুনে মধ্যরাত থেকে আশপাশের বিহারি ক্যাম্প, থানাঘাট ও বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দারা ময়মনসিংহ পৌরসভা কার্যালয়ের কাছে শামীমের কারখানা ও বাসভবনের সামনে জড়ো হন।
এক পর্যায়ে ভিড়ের চাপে ফটক খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড় করে ঢোকার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ফটকের ভেতরে লাঠিপেটা শুরু করেন কারখানার কর্মচারীরা। কিন্তু ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন পড়ে গেলে পদপিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নারী ও শিশুদের মৃত্যু হয়।
এরপর স্থানীয়রা রিকশা ও ভ্যানে করে হতাহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। বেশ কয়েকজনের লাশ ঘটনাস্থল থেকেই নিয়ে যান স্বজনরা। সকালে কারখানার সামনে বহু মানুষের ছেঁড়া স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এক নারীর লাশ নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “যহন গেইট খুলছে, তহন পাড়াপাড়ি কইরা গেছে তো, মানে ধাক্কাধাক্কি কইরা গেছে, পইড়া গেছে। একজন পড়াতে আরও ১৫-২০ জন পড়ছে। পাড়া লাগছে, পাড়ার চোটে মারা গেছে।
এদিকে ঘটনার পর অধিকাংশ লাশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল থেকে স্বজনরা নিয়ে যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।
সকালে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পেলেও সব লাশ তাদের হাতে নেই। পরে পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বক্তব্যে লাশের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
নিহতদের তালিকা হওয়ার পর বিকালে ২৫ জনের লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মইনুল হক। রাতে সদরের ইউএনও আ ন ম সাইদুল হক পদদলিত হয়ে নিহত আরও দুইজনের লাশ দাফনের কথা জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, “যারা জাকাত দিচ্ছিলেন, তারা আগে থেকে পুলিশকে কিছু জানাননি। আর অনেক ভোরে ঘটনা ঘটায় পুলিশ আগে কিছু জানতেও পারেনি।”
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরে সেখান থেকে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১৩টি মৃতদেহ সরাসরি বাড়িতে নিয়ে যান নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। নিহত হওয়া ২৭ জনের মধ্যে ২২ জন নারী ও পাঁচটি শিশু। তার মধ্যে একই পরিবারের শিশুসহ তিন সদস্য রয়েছে।
পদদলিত হয়ে নিহত নারী ও শিশুরা হলেন হামিদা বেগম (৪৫), নাজমা বেগম (৫০), ফাতেমা বেগম (৬০), জোহরা খাতুন (৫২), রেজিয়া আক্তার (৪০), ফাতেমা বেগম ফতে (৪২), সুফিয়া বেগম (৬০), খোদেজা বেগম (৫০), মো. ছিদ্দিক (১২), সখিনা (৪০), সখিনার মেয়ে লামিয়া (২) ও সখিনার মা শামীমা ওরফে সামু বেগম (৬০), ফজিলা বেগম (৭৫), হাজেরা বেগম (৭০), মেঘনা বসাক (৩৫), মরিয়ম (৫০), সুধা রানী সরকার (৫৫), রীনা রানী দে (৬০), মমতাজ বেগম ওরফে টুকু (৪০), আঙ্গুরী বেগম (৩৫), সাহারন বেগম (৪০), রুবি আক্তার (১২), খোদেজা আক্তার (৫০) ও তাঁর নাতনি বৃষ্টি (১২), রহিমা বেগম (৫৫) ও ইতি। একজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহত ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া, কাঠগোলা, থানা ঘাট, কাছারি ঘাট, পাদগুদাম বিহারি ক্যাম্প ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা।
এ ছাড়া পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে হেনা আক্তার, রাজ, ময়না, রাসেল ও কালাচান নামের পাঁচজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।