বাজেটে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্তের ওপর বাড়তি করের বোঝা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ জুন ২০১৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩০ শতাংশ। বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সংগ্রহে প্রান্তিক পর্যায়ের করদাতাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে। পাশাপাশি চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপরও বাড়বে চাপ। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক বাড়ানোর ফলে পরোক্ষভাবে সাধারণ জনগণকেই বইতে হবে করের বোঝা।
আগামী অর্থবছর আয়কর থেকে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। চলতি অর্থবছর এর পরিমাণ ৪৯ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। বাড়তি এ অর্থ সংগ্রহে প্রান্তিক পর্যায়ে ন্যূনতম করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের ন্যূনতম করহার ৩ হাজার টাকা। তবে জেলা সদরের করদাতাদের ক্ষেত্রে তা ২ হাজার এবং অন্যান্য এলাকার করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা নির্ধারিত আছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ন্যূনতম কর ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের করদাতাদের ক্ষেত্রেও একই হার বহাল রাখা হচ্ছে।
আয়কর বাড়াতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাও করের আওতায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যমান আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন ব্যতীত অন্য ভাতাদি করমুক্ত রয়েছে। এটি বৈষম্যমূলক। তাই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বোনাস ও উৎসব ভাতার ওপর একই নিয়মে কর আরোপের প্রস্তাব করছি।
যেসব ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ী তাদের বিক্রির ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে আগ্রহী নন, তাদের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বার্ষিক ৩ হাজার, ৬ হাজার, ৮ হাজার ও ১১ হাজার থেকে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ হাজার ৬০০, ৭ হাজার ২০০, ১০ হাজার ও ১৪ হাজার টাকা টার্নওভার কর ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা বাড়বে।
রাজস্ব বাড়াতে উেস করের আওতা বাড়ানোর নির্দেশনাও রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। যেসব সেবা খাত উেস করের আওতায় আসেনি, সে ধরনের খাতগুলোকে চিহ্নিত করে উেস করের আওতায় আনার বিষয়ে বাজেটে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনিবাসী ব্যক্তির বেতন, সম্মানী, মূলধনি মুনাফা, সুদ ও রয়্যালটিকে উেস করের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া উৎস কর কর্তনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনটি খাতভিত্তিক নয় বিধায় তা পরিপালনে জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
এদিকে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যমান বিভিন্ন খাতে এর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। পরোক্ষভাবে এ বোঝা পড়বে ভোক্তা তথা সাধারণ জনগণের ওপর। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে মূসকের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব র্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্ষেত্রে সংকুচিত মূল্য ভিত্তিতে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। আগামী অর্থবছর থেকে এটিসহ উল্লিখিত খাতগুলোয় সংকুচিত ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে শিক্ষা ব্যয় আরেক ধাপ বাড়বে। এর বাইরে সাজসজ্জা ও বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নিয়োজিত কোচিং সেন্টারকে সেবা খাতের আওতায় এনে সেখান থেকে ভ্যাট আহরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে সুপারশপের ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার, স্বর্ণ ও রৌপ্যের দোকানদার এবং স্বর্ণের পাইকারি সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে স্বর্ণ ও রৌপ্য পণ্যের দাম বাড়বে।
এদিকে প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট খাতগুলো থেকে রাজস্ব আহরণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, যে হারে কর আহরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, মাঠপর্যায়ে সে হারে করা খুবই কষ্টকর হবে।