গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডের ১৯ ঘণ্টা পর পোশাক কারখানার আগুন নিভল
প্রকাশিত হয়েছে : ১ জুন ২০১৫, ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার পোশাক কারখানা ‘ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস’র আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ইস্পাতের কাঠামোর ওপর নির্মিত সাততলা ভবনটির ওপরের কয়েকটি তলা আগুনে ধসে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত কারখানাটিতে গতকাল দুপুর ২টাই আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আজ সকাল সাড়ে নটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ইস্পাতের কাঠামোগুলো দুর্বল হয়ে গলে পড়েছে। এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস সূত্র ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, রোববার দুপুরে কারখানাটি তৃতীয় তলার গোডাউনে আগুন সূত্রপাত হয়। তখন কারখানায় খাবারের বিরতি চলায় প্রায় সকল শ্রমিক ও কর্মকর্তারা ভবনের বাইরেই অবস্থান করছিলেন। ভবনটির দক্ষিণ পাশের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখে কারখানার কর্মচারীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা, জয়দেবপুর, শ্রীপুর এবং ময়মনসিংহের ভালুকা স্টেশনের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করে। তবে, ধাতব কাঠামোর পুরো ভবন আগুনে দ্রুত গরম হয়ে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত দরজা-জানালা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের উপরের অংশে পানি পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
প্রায় ১১ ঘণ্টার পর রাত দেড়টার দিকে কারখানা ভবনের বাইরের দিকের স্টিলের পাত ঝরে পড়তে শুরু করলে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা এক রকম হাল ছেড়ে দেন। তখনও কারখানার ওপরের অংশ জ্বলছিল। এরপর ভোরের দিকে ওপরের তিনটি তলা ধসে পড়লে আগুনের দাপট নিজে থেকেই কমে আসে। এরইমধ্যে আগুনে কারখানার বিপুলসংখ্যক পোশাক তৈরির মালামাল, মেশিনপত্রসহ পুরো কারখানাটি পুড়ে যায়।
এত দীর্ঘ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানতে চাইলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, কারখানার সাততলা ভবনটি ইস্পাতের তৈরি। এ কারণে কাছে গিয়ে আগুন নেভানো যায়নি। এ ছাড়া বাইরে থেকে পানি দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা ভবনটিতে রাখা হয়নি। আগুনে ভবনের দুইটি তলা অবশিষ্ট আছে। সেটি কোনো কাজে আসবে না। বাকি পাঁচতলার বেশির ভাগটাই ধসে পড়েছে। এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আক্তারুজ্জামান লিটন বলেন, কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস ডাম্পিংয়ের কাজ করছে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টা থেকে মাইকিং করে আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে বলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদেকুর রহমান জানিয়েছেন।
কারখানার শ্রমিক আরাফাত হোসেন বলেন, দুপুরে খাওয়ার সময় আগুন লাগায় তিনিসহ সব শ্রমিক কারখানার বাইরে অবস্থান করছিলেন। আরেক শ্রমিক সুলতান মিয়া বলেন, কারখানা পুড়ে নাই, আমাগো কপাল পুড়েছে। আবার কবে কারখানা চালু অইব, এর কোনো ঠিক নাই।
গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামী পাঁচ কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুন্নাহারের জানান, কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঘটনার সময় তৃতীয় তলায় বিরতি চলছিল। এ সময় ওই তলার গুদামঘরের দক্ষিণ পাশের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখে আগুনের বিষয়টি নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন তৃতীয় তলার পুরো অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে তৃতীয় তলার গার্মেন্টসসহ সব সরঞ্জাম পুড়ে গেছে।