একনেকে ৬৭৮ কোটি টাকায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন প্রকল্প অনুমোদন
বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও বিয়ানীবাজারবাসীর আবার ঘুম ভাঙাবে লাতুর ট্রেন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০১৫, ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ
এ.জে লাভলু, বড়লেখা ::
মৌলভীবাজারের বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজারবাসীর আবার ঘুম ভাঙাবে লাতুর ট্রেন। কথাগুলো এখন বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে। গত ২৬ মে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) ৬৭৮ কোটি টাকায় অনুমোদনের সংবাদে আনন্দের বন্যায় ভাসছে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
এ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন এমপিকে অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় পৌর শহরে আনন্দ মিছিল করে বড়লেখার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
জানা যায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) অনুমোদন হওয়া রেল লাইনের কাজের উদ্বোধন হবে আগামী ৭ জুন। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে রেল লাইনের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, চার উপজেলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল রেল লাইনটি চালু করার। জনগণের বহুল কাঙ্ক্ষিত রেল লাইনটি একনেকে অনুমোদন হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৭ জুলাই বিএনপি জোট সরকার কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পথে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা, কাঠের স্লিপারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় লোকসান সহ নানা কারণ দেখিয়ে। ফলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে। রেললাইনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় আর উদাসীনতায় এ রেল লাইনটি অরক্ষিত থাকায় রেল লাইনের কোটি কোটি টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি, রেল স্লিপার, রেল লাইনের পাথর সহ মূল্যবান জিনিসপত্র লোপাট চলছে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইনের পাশে রেলওয়ের ভূমির বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলে পাকা ঘর নির্মাণ সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছে ভূমি খেকো চক্র। এছাড়া রেলের অনেক ভূমি অবৈধ দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। এ পথে ট্রেনটি পুনরায় চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘটন বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে।
গত ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর আর প্রকল্পটির কোনো কাজই হয়নি।
২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরকালে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন রেল লাইন চালুর দাবি জানান। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে রেল লাইন চালুর ঘোষণা দেন। অবশেষে গত ২৭ মে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) ৬৭৮ কোটি টাকায় অনুমোদন হওয়ার সংবাদে আনন্দের বন্যায় ভাসতে থাকে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, এ পথে পুনরায় ট্রেনটি চলাচল শুরু হলে ১৮টি চা বাগানসহ বৃহত্তর বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি পণ্য আমদানী ও যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সরকার রেলওয়ের বেহাত হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করতে পারবে। এ রেলপথটি চালু হলে জ্বলে উঠবে সিগনাল। সচল হবে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর রেলস্টেশন। আবারও ঘুম ভাঙাবে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসীর।