ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর
৩ বিলিয়ন ডলার ঋণসহ ১০ চুক্তির সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০১৫, ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিনের সফরে ঢাকা আসছেন আগামী ৬ জুন। দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার এ সফরকে দেখা হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। কারণ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ৩ বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সংশোধন, নৌ-প্রটোকল নবায়ন, উপকূলীয় নৌযান চলাচল, সমুদ্র অর্থনীতিসহ ১০ চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই ও নবায়নেরও সম্ভাবনা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির এ সফরে।
স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল ভারতের সংসদে পাস হওয়ার পর সামনে এসেছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। বাংলাদেশ চাইছে নরেন্দ্র মোদির এ সফরেই তিস্তা ইস্যুর সমাধান। তবে মূল চুক্তি না হলেও অন্তর্বর্তী একটি চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রগুলো বলছে।
নরেন্দ্র মোদির সফরে সই হতে যাওয়া সম্ভাব্য চুক্তি ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ২২ মে ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্রমতে, নরেন্দ্র মোদির সফরে সড়ক অবকাঠামো-সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। দুই দেশের মধ্যে দুটি বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। তাই দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে ১৬ মে ভারত যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সফরকালে ভারতের পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
এদিকে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ৫ মে বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে তার দফতরে দেখা করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনায় নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এলওসি: নতুন ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ দিতে আগ্রহী ভারত। এর পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার। নরেন্দ্র মোদির সফরে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া চলমান এলওসির আওতায় প্রায় ৭ কোটি ডলার বাড়ানো হবে। চলমান কয়েকটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অর্থ বাড়ছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে নতুন এলওসির জন্য কয়েকটি প্রকল্প তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) জন্য ৫০০ বাস (৩০০ দ্বিতল ও ২০০ আর্টিকুলেটেড) ও ৪০০ ট্রাক ক্রয় এবং আশুগঞ্জ আইসিটি নৌ-টার্মিনাল। এছাড়া রেলেরও কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হবে। পাশাপাশি ভারতের জাহাজ চলাচলের উপযোগী ১২টি নৌপথ চালু করতে কিছু নদী ড্রেজিং করতে হবে। এতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
এলওসির ঋণের শর্তের মধ্যে রয়েছে— আট বছর বা এর কম মেয়াদে ঋণ নিতে চাইলে সুদহার হবে লন্ডন আন্তঃব্যাংক (লাইবর) হারের সঙ্গে আরো ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৯ থেকে ১২ বছর মেয়াদি ঋণ নিতে চাইলে সুদহার হবে লাইবরের সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ১৩ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি ঋণের সুদহার হবে লাইবরের সঙ্গে ৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে এ ঋণের সুদহার হবে গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। কমিটমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট ফি নির্ধারিত হবে আলোচনাসাপেক্ষে।
বাংলাদেশ সরকারকে এ ঋণের গ্যারান্টার হতে হবে। এছাড়া প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে গ্রহণ করতে হবে। বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা বাংলাদেশ নিজস্ব বা অন্য দেশ থেকে আনতে পারবে। পাশাপাশি চুক্তিমূল্যের ৮৫ শতাংশ ঋণ আকারে দেয়া হবে। বাকি ১৫ শতাংশ অনুদান হিসেবে ব্যবহার হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এশিয়া উইংয়ের প্রধান আসিফ-উজ-জামানের এ প্রসঙ্গে জানতে জানান, ‘দ্বিতীয় দফায় এলওসির পরিমাণ কত হবে, তা ভারতীয় দূতাবাস বলতে পারবে। আমার কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই।’
ভারতীয় দূতাবাস ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১০ সালে এলওসির আওতায় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। এর মধ্যে ৮০ কোটি ডলার ঋণ ও ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য অনুদান হিসেবে দিচ্ছে দেশটি।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি: দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। চুক্তিতে আগে শুধু ভারতের জন্য ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ ছিল। সংশোধনীতে বাংলাদেশেরও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখা হয়েছে। চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হবে এটি।
মূলত চুক্তির আওতায় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট চালু হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাশুল আরোপের জন্য এরই মধ্যে দুই দেশ কাজ শুরু করেছে। উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এজন্য প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় নৌযান চলাচল চুক্তি: দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় নৌযান চলাচলের জন্য খসড়া চুক্তি এরই মধ্যে সই হয়েছে। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় এটি পাসও হয়েছে। আর চুক্তিটির পরিচালনা-সংক্রান্ত বিস্তারিত স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরেই মূল চুক্তি ও এসওপি দুটিই সই হওয়ার কথা রয়েছে।
নৌ-প্রটোকল নবায়ন
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ-প্রটোকল নবায়নের আগে লেটার অব এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যমান নৌ-প্রটোকল চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন হচ্ছে। সেই সঙ্গে চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হবে। সংশোধিত খসড়া আজ আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে এটি সই হবে।
নৌপথে যাত্রী পবিহন
দুই দেশের মধ্যকার পর্যটন বিকাশের জন্য নৌপথ ও উপকূল দিয়ে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলেও একটি চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। ভারত এরই মধ্যে চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ অংশে এখনো প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে এটি। নরেন্দ্র মোদির সফরেই যাতে চুক্তিটি সই হয়, সে চেষ্টা চলছে।
সড়কের দুই চুক্তি
ঢাকা-সিলেট-সিলং-গুয়াহাটি ও কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস চলাচল-সংক্রান্ত দুটি চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির সফরে। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশুগঞ্জ বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণসহ ফেনী-বেলুনিয়া-সাবরুম-রামগড় সড়ক নির্মাণকাজ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি হবে। এর মধ্যে সড়কের দুটি চুক্তি রয়েছে। এছাড়া দু-তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর বা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত বলতে পারবে।
তবে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক নরেন্দ্র মোদির সফরের সার্বিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি । তিনি বলেন, ‘এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে সব বিষয় জানানো হবে।