আতংকের মধ্যে ছাতকের ঐতিহাসিক ইংলিশ টিলার নিচের বাসিন্দারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ মে ২০১৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বর্ষা মৌসুম এলেই আতংকের মধ্যে থাকেন ছাতকের ঐতিহাসিক ইংলিশ টিলার নিচে বসবাসকারী লোকজন। যেকোন সময় টিলার সু-উচ্চ সাহেবের মিনার ধ্বসে পড়ে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিপর্যয় নেমে আসতে পারে নিচে বসবাসরত ২০-২৫টি পরিবারের জন্যে।
ছাতকের প্রাচীন নিদর্শন ইংলিশ টিলার সু-উচ্চ সাহেবের মিনার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ছাতক শহরের প্রাণকেন্দ্র বাগবাড়ি এলাকার প্রায় মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত জর্জ ইংলিশ এসকুয়ারের সমাধিস্থল এ ইংলিশটিলা। টিলার চারপাশে ঘনবসতি আবাসিক এলাকার মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক বছরের পুরনো ইতিহাস সমৃদ্ধ ইংলিশ টিলাটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন থেকে। ফলে বৃহত্তর সিলেট তথা ছাতকের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটির অস্তিত্ব।
১৭৯৪ সালে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে জর্জ ইংলিশ এসকুয়ার নামের এক ইংলিশ ব্যবসায়ী সস্ত্রীক ব্যবসার জন্যে আসেন ছাতকে। তিনি এখানে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেন চুনাপাথর ব্যবসা। কথিত আছে তিনিই ছাতকে সর্বপ্রথম চুনাপাথর ব্যাবসা শুরু করেন এবং তার প্রচেষ্ঠায়ই ছাতকে সম্ভাবনাময় চুনাশিল্পের দ্বার উন্মোচিত হয়। জর্জ ইংলিশ ছাতকে থেকে প্রায় ৫০ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার সুবাদে স্থানীয় বাঙালি ও খাসিয়া ব্যবসায়ীদের সাথে তার গভীর সখ্যতাও গড়ে ওঠে। ১৮৫০ সালে ৭৬ বছর বয়সে জর্জ ইংলিশ ছাতকে মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী হেনরী ইংলিশ স্বামীর ব্যবসা-বানিজ্য দেখাশুনা করতেন। ঐ বছরই হেনরী ইংলিশ স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে টিলার উপর নির্মাণ করেন একটি দর্শনীয় বিশাল স্মৃতিসৌধ। পরবর্তীতে স্মৃতিসৌধটি ‘সাহেব মিনার’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় ২৫ ফুট উচু ও বর্গাকারে সাড়ে চারফুট চওড়া মিনারটির গায়ে মার্বেল পাথরে খোদাই করা ইংরেজিতে লেখা ইংলিশ দম্পতির ইতিহাস আজো সেই স্বাক্ষ্য বহন করে আসছে। জর্জ ইংলিশ মারা যাবার ক’বছর পর তার স্ত্রী হেনরী ইংলিশ ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এ দেশ থেকে নিজ দেশ ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান।
এ সময় থেকে ইংলিশ টিলা ও সাহেব মিনার সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এক ভূমিকম্পে সু-উচ্চ মিনারের মাঝের অংশ ভেঙে টিলার উপরে পড়ে গেলে উপরের ক্রমান্বয় সরু অংশ নিচের অংশে এসে আড়াআড়িভাবে বসে যায়। দেশ স্বাধীনের আগে বা পরে কোন সরকারের আমলেই টিলাটি সংরক্ষণের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সরকারি তত্ত্বাবধান না থাকায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে একটি মহল অবৈধভাবে টিলার গোড়া থেকে মাটি কেটে বিক্রি করায় টিলার ওপর নির্মিত এ স্মৃতি সৌধটি পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। বিশাল এ মিনারটির গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে মিনারের প্রায় শতকরা ৪০ভাগ ফাউন্ডেশন বেরিয়ে পড়েছে। মিনারের ক’টি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি অংশ ভেঙে পড়েছে।
ছাতক পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ চন্দ্র রায় জানান, মিনারটি অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ এতে কোন সন্দেহ নেই। পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র তাপস চৌধুরী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ মিনারের নীচ থেকে বসবাসরত মানুষকে অন্যত্র সরে যেতে ক’বছর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নোটিশ ও মাইকে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু কেউই সরে যায়নি। টিলার ভয়াবহতার কথা স্বীকার করে উপজেলা চেয়াম্যান অলিউর রহামান চৌধুরী বকুল জানান, ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। টিলার নীচে বসবাসরত মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। টিলাটি পৌর শহরের মধ্যে অবস্থিত। উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট রয়েছে। কাজেই পৌর পরিষদের সমন্বয় ও সহযোগিতা পেলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।