তামিম, ইমরুলের আগ্রাসী শতকে বাংলাদেশের দাঁত ভাঙা জবাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১ মে ২০১৫, ৩:১৮ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
পাকিস্তানের পাহাড় প্রমাণ রানের চাপ কি দারুণভাবেই না ঝেড়ে ফেললেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। শতক পাওয়া উদ্বোধনী এই দুই ব্যাটসম্যানের রেকর্ড জুটিতে ম্যাচ বাঁচানোর পথে রয়েছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের রান বন্যার জবাব ব্যাটেই দিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে খুলনা টেস্টকে সমতায় ফিরিয়েছেন দ্রুতগতিতে রান তোলা তামিম-ইমরুল।
শুক্রবারের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭৩ রান। ১৩৮ রানে তামিম ও ১৩২ রানে ইমরুল যখন পঞ্চম দিন নতুন করে ব্যাট করতে যখন নামবেন, তখন ম্যাচ বাঁচানোর চাপটা আর থাকবে না।
২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ভালো সূচনার জন্য তাকিয়ে ছিল আগের টেস্টেই শতক করা তামিম-ইমরুলের দিকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে নিজেদের রেকর্ড ভেঙেছিলেন তারা।
টানা দুই ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড ভাঙার কৃতিত্ব দেখিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের প্রায় সমতায় নিয়ে আসেন তামিম-ইমরুল। ২৩ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা, তাদের হাতে আছে পুরো ১০টি উইকেটই।
যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও নিজেদের করে নেন তামিম-ইমরুল। ২০১৩ সালে গলে পঞ্চম উইকেটে ২৬৭ রানের জুটি গড়ে আগের রেকর্ড গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিন টেস্টে শতক করার কৃতিত্ব দেখান তামিম। সপ্তম শতকটি করে আশরাফুলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড নিজের করে নেন এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।
তামিমের ১৮৩ বলের ইনিংসটি ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ। ইমরুলের ১৮৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ১৫টি চার ও ৩টি ছক্কায়।
টানা দুই ম্যাচে শতক পেলেন ইমরুল। দারুণ ছন্দে আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ চার টেস্টে এ নিয়ে তিনটি শতক করলেন তিনি। পাকিস্তান ইনিংসের ৩৭তম থেকে ১৫৬তম ওভার পর্যন্ত উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
এর আগে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ৫৩৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে প্রথম ইনিংসে ৬২৮ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রানে অলআউট করায় ২৯৬ রানের লিড পায় তারা।
আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ ও আসাদ শফিক স্বাগতিকদের হতাশ করে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করেন সরফরাজ-শফিক। দ্রুত রান তুলতে থাকা এই জুটি ভাঙার কৃতিত্ব অভিষিক্ত মোহাম্মদ শহীদের। তার বলে বদলি ফিল্ডার লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন সরফরাজ।
৮৮ রান করে পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ১২৬ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। এরপর আর ভালো করতে পারেনি অতিথিরা। স্বাগতিকদের চমৎকার বোলিংয়ে ৩৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে দ্রুত ফিরে যান পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যানরা। ছয় টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়ার পথে ওয়াহাব রিয়াজ, ইয়াসির শাহ ও জুলফিকার বাবরকে আউট করেন তাইজুল।
১৬৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তাইজুল বাংলাদেশের সেরা বোলার। দিনের শেষ উইকেটটি নেন সাকিব আল হাসান। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শফিককে ফেরান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
শুক্রবারও মাঠে নামেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিক। তার জায়গায় আগের দুই দিনের মতো ‘কিপিং’ শুরু করেন ইমরুল। দিনের আট ওভার খেলা হওয়ার পর তিনি সরে দাঁড়ালে গ্লাভস হাতে উইকেটে পেছনে আসেন মাহমুদউল্লাহ। পরে বাবরকে স্টাম্পিংও করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১২০ ওভারে ৩৩২ (তামিম ২৫, ইমরুল ৫১, মুমিনুল ৮০, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাকিব ২৫, মুশফিক ৩২, সৌম্য ৩৩, শুভাগত ১২*, তাইজুল ১, শহীদ ১০, রুবেল ২; ওয়াহাব ৩/৫৫, ইয়াসির ৩/৮৬, হাফিজ ২/৪৭, বাবর ২/৯৯) ও ৬১ ওভারে ২৭৩/০ (তামিম ১৩৮*, ইমরুল ১৩২*)
পাকিস্তান: ১৬৮.৪ ওভারে ৬২৮ (হাফিজ ২২৪, সামি ২০, আজহার ৮৩, ইউনুস ৩৩, মিসবাহ ৫৯, শফিক ৮৩, সরফরাজ ৮২, ওয়াহাব ০, ইয়াসির ১৩, বাবর ১১, জুনায়েদ ০; তাইজুল ৬/১৬৩, শুভাগত ২/১২০, শহীদ ১/৫৯, সাকিব ১/১৪৬)।