নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা
র্যাবের ২৫ জন সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ এপ্রিল ২০১৫, ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় করা দুই মামলায় র্যাবের ২৫ জন সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফুর রহমান, এম এম রানা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন রয়েছেন। নূর হোসেন ভারতে কারাবন্দী রয়েছেন।
সাত খুনের ঘটনার প্রায় এক বছর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৩৫ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন, অন্যরা পলাতক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সঙ্গে আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের প্রভাব-প্রতিপত্তিসহ বিভিন্ন বিরোধকে কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে অভিযুক্ত র্যাব সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, নজরুলকে অপহরণের ঘটনা দেখে ফেলায় আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালককেও অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফুর রহমান, এম এম রানাসহ র্যাব-১১-এর যে ২৫ জন সদস্যকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের আটজন এখনো পলাতক। বাকি ১০ আসামি হলেন নূর হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। ভারতে কারাবন্দী নূর হোসেনকে সরকার দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠনের পর এই প্রথম কোনো মামলায় একসঙ্গে এত র্যাব সদস্য অভিযুক্ত হলেন। র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।
অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাঁদের পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া পলাতক নূর হোসেনকেও দেশে ফিরিয়ে আনা হয়নি। অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে তিনি আদালতে নারাজি দেবেন।
জানা যায়, এই মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ১৬২টি আলামত দুটি বস্তায় ভরে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও এজাহারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে পুলিশ।
কারাগারে আটক অভিযোগপত্রভুক্ত অন্যরা হলেন র্যাবের এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, বাবুল হাসান, আরজি ওয়ান আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বিল্লাল হোসেন, রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান নূর। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ পাঁচ সহযোগী হলেন মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, আলোচিত সাত খুনের মামলা তদন্তের জন্য ১১ মাস খুব বেশি সময় নয়। তবে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা, পেশাদারি ও ত্রুটিমুক্তভাবে অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। দোষী কাউকে বাদও দেওয়া হয়নি। আবার অহেতুক কাউকে জড়ানোও হয়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সবকিছু করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে ৩৫ জনের মধ্যে ২২ জনকে ইতিমধ্যে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ১৩ জন পলাতক রয়েছেন।