কামারুজ্জামানের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত, যে কোনো সময় দণ্ডাদেশ কার্যকর
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ এপ্রিল ২০১৫, ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে রিভিউ খারিজ আদেশের কপিতে গতকাল স্বাক্ষর করেননি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ। আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছালে যে কোনো সময় দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে একাত্তরে হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ময়মনসিংহ আলবদর বাহিনীর প্রধান এই যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল সোমবার রিভিউ খারিজের রায় ঘোষণা করেন।
গতকাল ৬ এপ্রিল সকাল ৯টা ৫ মিনিটে এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ডিসমিসড।’ তবে রিভিউ খারিজ আদেশের কপিতে গতকাল স্বাক্ষর করেননি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ। গতকাল রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রিভিউ খারিজের আদেশের কপিও কারাগারে পৌঁছায়নি। এদিকে, রিভিউ আবেদন খারিজের পর নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রয়েছে। আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছালে যে কোনো সময় দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে। রিভিউ আবেদন খারিজের পর কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বাসিন্দারা উল্লাস করেছেন।
আনন্দ মিছিল করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। এই রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে রায়ের পর গতকাল কামারুজ্জামানের বাড়িতে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর অবস্থান ছিল না। রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর কালশীর ৪ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর বাড়ির আশপাশের পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।
এদিকে দণ্ড কার্যকরের সব আয়োজন এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কারাগারে ‘শেষ দেখা’ করেন তার স্বজনরা। ঘণ্টাব্যাপী কারাগারে অবস্থানের পর কামারুজ্জামানের বড় ছেলে কারাফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলা ও তার রায় ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। যারা এই রায় লিখেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম। এই রায়ে আমার বাবা বিচলিত নন।’ তিনি জানান, আদালতের আদেশের কপি তার বাবার কাছে পৌঁছেনি। তার কাছে পৌঁছার পর আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির গতকাল বলেন, ‘বিচারপতিরা এখনও আদেশে স্বাক্ষর করেননি বলে আমরা জেনেছি।’
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছিল। একাত্তরে আলবদর কমান্ডার যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার সর্বোচ্চ সাজা আপিল বিভাগ বহাল রাখল।
রিভিউ খারিজের পর মঙ্গল ও বুধবার দুই দিনের হরতাল ডেকেছে জামায়াত। যে কোনো নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে বিজিবি, র্যাব-পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন। সেখানে দণ্ডাদেশ কার্যকরের ব্যাপারে আলোচনা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, কারাগারে আদেশ না গেলে কীভাবে দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে? কারা কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, কামারুজ্জামানের দণ্ডাদেশ যে কোনো মুহূর্তে কার্যকর হবে। এই রায় কার্যকরকে ঘিরে কোনো নাশকতা হলে কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করা হবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন সমকালকে বলেন, রিভিউ খারিজের আদেশনামা কারাগারে পৌঁছার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রায়ের কপি এখনও পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে ফাঁসির মঞ্চে কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়, সেই মঞ্চে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হবে। গতকাল সেখানে জল্লাদ রাজু আর জনির নেতৃত্বে মহড়াও হয়।
যেসব অভিযোগে ফাঁসি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ কার্যকর করার আদেশ দেন। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুরে ১৬৪ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আর তাকে গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ দেন আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায়েও বহাল রাখা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগে এক শিক্ষককে নির্যাতনের ঘটনায় এই জামায়াত নেতাকে ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের কারাদ দেন। আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।