দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ৬৯ টাকা দৈনিক মজুরি!
উত্তীর্ণ হচ্ছে চা শিল্প শ্রমিকদের ৩য় দফা মজুরীর মেয়াদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০১৫, ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ ::
চা শ্রমিকদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনের ৮ মাস অতিবাহিত হতে চললেও চা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা। দু’বছর অন্তর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা থাকলেও ২০০৯ সনের পর আর কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এককভাবেই মালিক পক্ষ কয়েক দফায় সর্বশেষ চা শ্রমিকদের সর্বোচ্চ মজুরি ৬৯ টাকা নির্ধারণ করে। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ আনুষঙ্গিক সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর নির্বাচিত শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা মাসিক চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত থাকলেও মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে তারা সক্রিয় নন বলে শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর চা শ্রমিকদের মজুরী এ ক্লাস বাগানে দৈনিক ৪৮ টাকা, বি ক্লাস বাগানে ৪৬ টাকা এবং সি ক্লাস বাগানে দৈনিক ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ চা এসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত উল্লেখিত মজুরীর মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
২০১১ সালের ৩১ আগস্ট চা শ্রমিকদের মজুরী সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর চা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করলে মালিক পক্ষ ৪৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫২ টাকা ৬২ টাকা এবং সর্বশেষ সর্বোচ্চ মজুরি ৬৯ টাকা নির্ধারণ করেন। মালিক পক্ষের নির্ধারিত ৬৯ টাকা হিসাবে শ্রমিকরা এখনো মজুরি পাচ্ছেন।
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে শ্রমিক নেতারা আন্দোলন শুরু করলে ২০১৪ সনের ১০ আগস্ট দেশের ৫টি জেলার ২০টি উপজেলার ৭টি ভ্যালিতে (অঞ্চলে) ২২৭টি চা বাগানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মাখন লাল কর্ম্মকার সভাপতি ও রামভজন কৈরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমিটি নির্বাচিত হওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এক টাকাও মজুরি বৃদ্ধি পায়নি।
চা শ্রমিক নেতা ও ইউপি সদস্য সীতারাম বিন বলেন, নির্বাচিত কমিটি লেবার হাউস সংস্কারের নামে প্রথম দফা শ্রমিকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা ৪০ টাকা ও পরে নিয়মিত ১০ টাকা হারে আদায় করে নিচ্ছেন। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধিসহ চা শ্রমিকদের কল্যাণে বাস্তবে কোন কাজ করছেন না।
চা শ্রমিক সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ৫ সদস্যের একটি চা শ্রমিক পরিবারের দৈনিক ৩০০ টাকা হিসাবে মজুরি বাস্তবায়ন দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারপার্সন মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়ান বলেন, আমাদের হাজার হাজার হেক্টর জমি চা বাগানের দখলে রয়েছে। অথচ চা বাগান সবগুলো জমিতে চা চাষাবাদ করছে না। চা শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিকের গত দু’তিন বছরে এক টাকাও মজুরি বাড়েনি। এটি চা শ্রমিকদের জন্য অতীব দুঃখের বিষয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়মিতহারে মাসিক ১০ টাকা হারে যে চাঁদা উত্তোলন হচ্ছে সেটি শ্রমিকদের কল্যাণে, প্রশাসনিক ও অফিস পরিচালনার জন্য ব্যয় হবে। তিনি আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিপূর্বে বিটিএ’র সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের ১ম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে হরতাল-অবরোধ এসব বিভিন্ন কারণে কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে এবং মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে বলে জানান।