শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০১৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
অবশেষে চোকার তকমা মুছল দক্ষিণ আফ্রিকা; ব্যাটে-বলে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠে গেছে তারা।
ইমরান তাহির ও জেপি ডুমিনির অসাধারণ বোলিংয়ের পর কুইন্টন ডি ককের দুর্দান্ত এক অর্ধশতকে প্রথম কোয়ার্টার-ফাইনালে ৯ উইকেটে জিতেছে প্রোটিয়ারা।
লাহিরু থিরিমান্নে ও কুমার সাঙ্গাকারা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে পারেননি। দুই স্পিনার তাহির ও ডুমিনির দারুণ বোলিংয়ে ৩৭.২ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
জবাবে বিশ্বকাপে ডি ককের প্রথম অর্ধশতকে ১৮ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে এই প্রথম জয় পেল তারা।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হাশিম আমলাকে নিয়ে দলকে ভালো সূচনা এনে দেন ডি কক। ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে আমলা ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন ডি কক। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে ফাফ দু প্লেসির সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার বিদায় নিশ্চিত করেন ডি কক। এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৭৮ রানে। তার ৫৭ বলের ইনিংসটি ১২টি চার সমৃদ্ধ।
৩২ ওভার হাতে রেখে পাওয়া জয়ে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন দু প্লেসি।
গত দুই আসরের রানার্সআপদের বিদায়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ হল সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের।
এর আগে বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দিক হারায় শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৪ রানের মধ্যে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন।
ছন্দে থাকা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নের জায়গায় ইনিংস উদ্বোধন করেন কৌশল পেরেরা। ভার্নন ফিল্যান্ডারের জায়গা দলে ফেরা কাইল অ্যাবট ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন তাকে। ডেল স্টেইনের বলে দু প্লেসিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিলকরত্নে দিলশান। ১৯ বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
শুরুতে প্রতিটি রানের জন্য লড়াই করতে হয় শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। গত চার ম্যাচে টানা চারটি শতক করা কুমার সাঙ্গাকারা ছিলেন ভীষণরকম নিষ্প্রভ। রানের গতি বাড়াতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন থিরিমান্নে। সাঙ্গাকারার সঙ্গে ৬৫ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন থিরিমান্নে। ১৫ ওভার স্থায়ী এই জুটিতে সাঙ্গাকারার অবদান মাত্র ১৫ রান।
ফিরতি ক্যাচ নিয়ে থিরিমান্নেকে বিদায় করে শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ ভাঙেন ম্যাচ সেরা তাহির। মাত্র ৬২ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে দেড়শ’ পর্যন্তও যেতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
খাদের কিনারা থেকে উঠতে শ্রীলঙ্কা তাকিয়ে ছিল মাহেলা জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারার দিকে। কিন্তু এবার আর পারেননি তারা। মাত্র চার রান করে লেগস্পিনার তাহিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন জয়াবর্ধনে।
অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন সাঙ্গাকারা। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়ে ম্যাথিউসের বিদায়ে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
ডুমিনির করা ৩৩তম ওভারের শেষ বলে ফাফ দু প্লেসির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ম্যাথিউস। নিজের পরের ওভারের প্রথম দুই বলে নুয়ান কুলাসেকারা ও থারিন্দু কৌশলকে বিদায় করে হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতেন ডুমিনি। তিনি মাত্র ২৯ রানে নেন তিন উইকেট।
বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করা ডুমিনি কুলাসেকারাকে উইকেটরক্ষক কুইন্ট ডি ককের গ্লাভসবন্দি করেন। আর অভিষিক্ত থারিন্দু এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন।
ডুমিনির এই দুই ওভারের মাঝখানে থিসারা পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন তাহির। পরে লাসিথ মালিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন তিনি। মাত্র ২৬ রানে চার উইকেট নিয়ে এই লেগস্পিনার দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ যতটা সম্ভব বড় করার একটা চেষ্টা করেছিলেন সাঙ্গাকারা। কিন্তু তার চেষ্টা সফল হয়নি। মর্নে মরকেলের বলে ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৪৫ রানের ইনিংসটি। তার ৯৬ বলের স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংসটি মাত্র তিনটি চারে সাজানো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৩৭.২ ওভারে ১৩৩ (কৌশল পেরেরা ৩, দিলশান ০, সাঙ্গাকারা ৪৫, থিরিমান্নে ৪১, জয়াবর্ধনে ৪, ম্যাথিউস ১৯, থিসারা ০, কুলাসেকারা ১, থারিন্দু ০, চামিরা ২*, মালিঙ্গা ৩; তাহির ৪/২৬, ডুমিনি ৩/২৯, স্টেইন ১/১৮, অ্যাবট ১/২৭, মরকেল ১/২৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮ ওভারে ১৩৪/১ (আমলা ১৬, ডি কক ৭৮*, দু প্লেসি ২১*; মালিঙ্গা ১/৪৩)
ম্যাচ সেরা: ইমরান তাহির।