অবশেষে নিজেরাই শুরু করলেন রাস্তার কাজ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল, রাজনগর ::
সড়ক মেরামতের দাবিতে গ্রামবাসী ছুটেছেন অনেকের কাছে। ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি এমপি পর্যন্তও। কিন্তু কোন কাজই হয়নি। ৮-৯ বছর অপেক্ষাই করতে হয়েছে। অবশেষে নিজেরাই শুরু করলেন ভাঙাচুরা আর খানাখন্দে ভরা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বাগেশ্বর-আমীরপুর রাস্থার কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কাওয়াদিঘি হাওর পাড়ের গ্রাম আমীরপুরের ব্রিজের কাছে আমীরপুর-বাগেশ্বর রাস্তার উপর নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। সেখানে মাটি শ্রমিকরা পাশের ধানী জমি থেকে মাথায় করে টুকরি টুকরি মাটি এনে ফেলছেন। গ্রামের লোকজন কোদাল ও টুকরো বাঁশ দিয়ে সেই মাটি ভাঙচুর করে ঢেলে সমান করছেন। রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট সমান গর্ত। অনেক স্থান নিচু জমিনের সাথে মিশে গেছে।
আমীরপুর গ্রামের শামছুল হক (৫৫) বলেন, ‘আমরারে কেউ এলাও করে না। রাস্তার লাগি এমপি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান সবার কাছে হাটতে হাটতে হয়রান। দেখি নিজেরা এখন করতে পারি কি না!’ গ্রামের উপস্থিত লোকজন জানালেন, রাস্তার জন্য প্রত্যেকেই ১০০ থেকে ৫০০ টাকা করে যার যার সামর্থ্য মতো চাঁদা দিচ্ছেন। সাথে শ্রম দিচ্ছেন। এভাবে প্রাথমিকভাবে নগদ সাত হাজার টাকা চাঁদা ওঠেছে। সেই টাকা দিয়ে কাজ শুরুকরা হয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য অন্তত লাখ দেড়েক টাকা তুলে সেই টাকায় শ্রমিক লাগিয়ে ও নিজেদের শ্রম দিয়ে রাস্তার গর্তসমূহ ভরাট করে রাস্তাটিকে চলাচলের উপযোগী করা যাবে।
আমীরপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘ভোট আইলে সবাই আইন (আসেন)। লাইন ধরি ভোট দিই। বর্ষাত রাস্তা থাকা সত্ত্বের নৌকা দিয়া চলা লাগে। এই রাস্তা দিয়া হাওরের কোটি কোটি টাকার মাছ দেশের বিভিন্নস্থানে যায়। ধান যায়। গরীবর উন্নতি অইলো ভোটও। ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো উন্নতি নাই।’
খিজির আহমদ (৩০) বলেন, প্রায় আট থেকে নয় বছর হলো রাস্তাটির প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা অংশে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বাকি এক কিলোমিটারে ইট বিছানো থাকলেও সেই অংশটিতেও ভেঙেচুরে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কারের অভাবে পায়ে চলাও মুশকিল।
গ্রামবাসী জানান, আমীরপুর-বাগেশ্বর রাস্তা দিয়ে শুধু কাওয়াদিঘি হাওর পাড়ের আমীরপুর, বাগেশ্বর, খালদার, পেটুগাঁও, কুচকিপুর ও জালালপুর গ্রামের লোকজনই চলাচল করেন না। ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলের মানুষের কাওয়াদিঘি হাওরে বোরো ফসলের মৌসুমে গরু-মহিষ নিয়ে যাওয়া-আসা এবং বৈশাখ মাসে পাকা ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার একমাত্র পথ। অন্যদিকে চার-পাঁচটি গ্রামের শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের পাঁচগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু রাস্তাটি ভেঙেচুরে এতটাই নিচু ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাসে কাওয়াদিঘি হাওরের স্বাভাবিক পানিতে রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়। ।
আমীরপুর আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার সম্পাদক মাওলানা অলিদ আহমদ বলেন, এখন নিজেরা যখন কাজ শুরু করছি। যতটা পারি নিজেরাই করবো। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বেচ্ছাশ্রম ও গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় আমীরপুর-বাগেশ্বর রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে কাজ শুরু হয়েছে।
পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিহির কান্তি দাস মঞ্জু বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা ইউনিয়নে কাজ করছি। এই রাস্তায়ও করতে চাইছি। কিন্তু বাগেশ্বর এলাকায় মাটি না পাওয়ায় কাজ করতে পারিনি। এবার লোকজন এসে মাটি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তার আগে সব প্রকল্পের বরাদ্দ শেষ। আগামীতে দেখবো।’
রাজনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো. রুবাইয়্যাত জামান বলেন, রাস্তাটি ঠিক চিনতে পারছি না। মনে হয় রাস্তাটি আমাদের উন্নয়ন তালিকায় নেই। যদি না থাকে, খোঁজ নিয়ে রাস্তাটি উন্নয়ন তালিকায় ঢুকিয়ে দিবো।