মাগুরছড়ায় হকির কিংবদন্তি জুম্মন লুসাইকে সমাধিস্থ করা হলো
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০১৫, ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়ায় সমাধি করা হলো হকির কিংবদন্তি জুম্মন লুসাইকে। শৈশব স্মৃতিবিজড়িত মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতেই গতকাল ২২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় তাকে সমাধি করা হয়।
জুম্মন এর লাশ সিলেট থেকে দুপুর ১টায় নিয়ে আসা হয় উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে। জাতীয় পতাকা ও হকি ফেডারেশন এবং আবাহনী, মোহামেডান ক্লাবের পতাকা দিয়ে মোড়ানো ছিল তার কফিন। ফুলে ফুলে ঢাকা মুখটি দেখা মাত্র কান্নার রোল পড়ে সেখানে। এ সময় এক হৃদয় বিধারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমত উল্লাহ, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের কোচ মাহবুব হারুন, জুম্মন লুসাইয়ের স্ত্রী থানপুই লুসাই ও তিন সন্তান রিচার্ড, কেলভিন ও ডেভিড, বড় ভাই ধনধন লুসাই, ছোট ভাই জুবেল লুসাইসহ নিকট আত্মীয় স্বজন। জুম্মন লুসাইয়ের মরদেহ পৌঁছালে, তার মুখটা এক নজর দেখার জন্য শুধু ক্রীড়াঙ্গনের লোকজনই ছিলেন না, সাধারণ ক্রীড়ানুরাগীদেরও ভিড় ছিল। প্রিয় তারকার মুখ দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। জুম্মন লুসাইকে সম্মান জানানো হয়। মরদেহ গাড়ি থেকে নামানোর পর মাঠ কাঁপানো সাবেক হকি তারকাকে পুষ্পস্তবক দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরে মরদেহের সামনে বাইবেল পাঠ ও ধর্মীয় আচার সম্পন্ন করা হয়।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি ছিল জুম্মন লুসাইয়ের সবচেয়ে প্রিয় স্থান। আর সেই স্থানেই চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হলো। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে দুপুর আড়াইটায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
জুম্মন লুসাই ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট সিলেটে লুসাই পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়। বাবার নাম হারেঙ্গা লুসাই। মাতার নাম হাউসিয়ামি লুসাই। জুম্মন লুসাই ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে নিজের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। বাংলাদেশ হকি জাতীয় দলের হয়ে তিনি প্রায় দশ বছর খেলেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের রক্ষণভাগের হয়ে খেলেন তিনি। বাংলাদেশের একমাত্র হকি খেলোয়াড় জুম্মন বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলার গৌরব অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপে ইরানের বিপক্ষে খেলায় হ্যাট্রিক করেন। ১৯৮২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৯ম এশিয়ান গেমসে অংশ নেন জুম্মন। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় এশিয়া কাপ ও ১৯৮৬ সালে সিউলের ১০ম এশিয়ান গেমস এবং ১৯৮৯ সালে দিল্লিতে তৃতীয় এশিয়া কাপে খেলেন হকির এ কিংবদন্তি। ১৯৮৯ সালে দিল্লিতে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করার পর আবাহনীর কোচের দায়িত্বও পালন করেন।