শ্রীলঙ্কায় আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ জানুয়ারি ২০১৫, ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
শ্রীলঙ্কার ভোটাররা আজ ৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। গত কয়েক দশকের মধ্যে এইটই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন করছেন।
রাজাপক্ষে আগেভাগে নির্বাচন দিয়ে ভেবেছিলেন, বিরোধীরা বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় বেশ সহজেই উতরে যাবেন। কিন্তু সেই সমীকরণ প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। কারণ, তাঁর একসময়ের সহযোগী ও বর্তমান প্রতিপক্ষ মাইথ্রিপালা সিরিসেনার নেতৃত্বে একটি বৃহৎ জোট গড়ে উঠেছে।
রাজাপক্ষে ২০০৫ সালে প্রথম নির্বাচিত হন। এরপর ২৬ বছরের পুরোনো গৃহযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি, যদিও রক্তাক্ত, ঘটানোর কারণে ২০১০ সালে তিনি আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
তামিলদের দমন করায় দেশটির সিংহভাগ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বদৌলতে রাজাপক্ষে সংবিধান সংশোধন করেন। এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানে যেকোনো সংখ্যক বার নির্বাচিত হওয়ার বিধান সংযুক্ত আর প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা যায়, গ্রামীণ সিংহলি জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে। বেকারত্বের ঊর্ধ্বগতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে এটা ঘটেছে। রাজাপক্ষের তিন ভাই ঊর্ধ্বতন সরকারি পদে কাজ করছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজাপক্ষের ২৮ বছর বয়সী সাংসদ পুত্রকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করায় এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক বিস্মিত হয়েছেন। নির্বাচন ঘোষণা করার এক দিন পর তিনি সরকার থেকে বেরিয়ে যান। শ্রীলঙ্কার ২১ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর ১৫ শতাংশই তামিল।
একসময়ের লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই) অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপকসংখ্যক সেনা উপস্থিতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অনুপস্থিতিই তামিলদের দুঃখ-দুর্দশার প্রধান কারণ।
উত্তরাঞ্চলের তামিল অধ্যুষিত অঞ্চল জাফনার রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিশ্লেষক আহিলান কাদিরগামার বলেছেন, ‘আম তামিল ভোটাররা গত ১০ বছরের শাসনে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে গেছে। এ সময়ে তারা কোনো সমঝোতা ও বেসামরিকীকরণের চেষ্টা করেনি। উপায়ন্তর না থাকায় তারা সিরিসেনাকে ভোট দেবে।’
রাজাপক্ষে সড়ক, রেল ও অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রকল্প দিয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ তামিলদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন, কোনো রাজনৈতিক ছাড় না দিয়ে তিনি চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধে ছারখার হয়ে যাওয়া উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে। কাদিরগামার বলেছেন, ‘সিরিসেনা রাজনৈতিক সমাধান ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে কিছু বলেননি। কিন্তু বহু মানুষ বিশ্বাস করছে, ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে তার কিছু সুযোগ তৈরি হবে।’
তামিলদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠী সিরিসেনাকে সমর্থন দিয়েছে। সম্প্রতি গজিয়ে ওঠা বৌদ্ধ কট্টরপন্থীদের সহিংসতায় উদ্বিগ্ন মুসলিম দলগুলো বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল ২০ জন সাংসদকে হারিয়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তাঁরা প্রচারণাকালে ২৩৭টি ‘বড় ঘটনা’ প্রত্যক্ষ করেছেন। এর মধ্যে আছে হামলা, ভয় দেখানো বা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন। সিরিসেনার তিন সমর্থক অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় আহত হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলেছে, ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে এলিট কমান্ডোদেরও নামানো হবে। তারা নির্বাচন কেন্দ্রে পাহারা দেবে।
বিরোধী নেতারাও অভিযোগ করেছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনী দিয়ে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করছে। আর প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য সরকারি টেলিভিশন তো আছেই। সরকারি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কাদিরগামারের মতে, ভোটারদের উপস্থিতিই আসলে বড় প্রশ্ন।
ওদিকে সমর্থন লাভের জন্য রাজাপক্ষে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছেন, পানি ও বিদ্যুতের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছেন। আর ১৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বাড়িয়েছেন।
পরপর কয়েকটি নির্বাচনী প্রচারণায় রাজাপক্ষে বিভাজনের সুরে কথা না বলার চেষ্টা করেছেন। দেশের সবাইকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা সে ‘তামিল, সিংহলি বা মুসলিম যা-ই হোক না কেন’। আর তিনি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না।