পাকিস্তানে তিন দিনের শোক পালন শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪, ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
পেশাওয়ারে স্কুলে তালেবান হামলায় নিহতদের স্মরণে তিন দিনের শোক পালন শুরু হয়েছে। ভারতেও স্কুলগুলোতে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আর এই ঘটনায় শোক এবং ঘৃণা প্রকাশে সামাজিক মাধ্যম বেছে নিয়েছেন বিশ্ববাসী।
পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১৩২ জন স্কুল শিক্ষার্থী সহ ১৪১ জন নিহত হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তিন দিনের শোক ঘোষণা করেন। বুধবার তার প্রথম দিন। এদিন নিহতদের স্মরণে পাকিস্তানে অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া যে রাজ্যে ঘটনা ঘটেছে সেই খাইবার-পাখতুনখোয়া রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অফিস, দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এদিকে নিহত কয়েকজনের জানাজা গত মঙ্গলবারই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, সন্ত্রাসী মামলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের উপর থাকা সাময়িক মুলতবি স্থগিত করা হবে। অর্থাৎ এই মামলার রায়ে যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে এখন থেকে সেটা কার্যকর করবে পাকিস্তান। সংবিধানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি থাকলেও এবং বিচারকরা এখনও মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেও ২০০৮ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে না পাকিস্তান। তখন থেকে মাত্র একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটি।
স্কুলে বর্বর হামলার পক্ষে পাকিস্তানি তালেবানের ঠুনকো যুক্তি
পাকিস্তানের পেশাওয়ারে স্কুলে বর্বর হামলা চালিয়ে বহু শিশু হত্যার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল মুসলিম দেশও জঙ্গি হুমকির হাত থেকে মুক্ত নয়। বিশ্ব-রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা সেটাই মনে করেন।
যাঁরা ঘটনাস্থলে থেকে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন, তাঁরাও হামলার ভয়াবহতায় প্রকম্পিত হয়েছেন। হামলাকারীরা সম্ভবত সেটাই চেয়েছিলেন। স্কুল শিক্ষার্থীদের হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানি তালেবান সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। ইচ্ছে করেই তালেবান সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে আক্রমণ করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের সমাজের মূল অংশকে আঘাত করতে চেয়েছে।
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলগুলো ক্যাডেট স্কুল নয়। সেনা কর্মকর্তাসহ সমাজের ধনাঢ্য ঘরের সন্তানেরা সেখানে পড়তে যায়, কারণ এই স্কুলগুলো পাকিস্তানের সেরা স্কুলগুলোর মধ্যে পড়ে।
স্কুলে হামলার মাধ্যমে তালেবান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও ইসলামাবাদের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সামরিক বাহিনী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। জেনারেলরা অনেক সময়ই সফলতার কথা বলেছেন, কিন্তু তাঁরা জঙ্গিদের একেবারে নির্মূল করতে পারেননি। অভিযানের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্ট এলাকা ছেড়ে গেছে।
পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য তালেবানের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য একের অধিক কারণ রয়েছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠীটির একসময় ইচ্ছা ছিল শুধু আফগানিস্তানের সরকার উৎখাত করা এবং কাবুলের আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা। এক্ষেত্রে তারা ইসলামাবাদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর যখন পাকিস্তান তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন জঙ্গিদের একটা অংশ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়।
পক্ষে-বিপক্ষে যে হামলা ঘটে চলেছে তা থেকে মুক্তির কোনো সহজ সমাধান নেই। ন্যাটো সেনারা যেহেতু আর ক’দিনের মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে, তাই পাকিস্তানের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেয়া উচিত: আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে থাকা হিন্দু কুশ পর্বতমালা এলাকায় যে-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শেষ হবে না। পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার লোকেরা যতদিন না চাকরির সুযোগ পাচ্ছে এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটছে ততদিন তালেবান তাদের দলে নতুন লোক ভেড়ানোতে সফল হয়ে যাবে।
একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামি জঙ্গিবাদ সবচেয়ে বড় হুমকি। পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশেরও এ থেকে মুক্তি নেই।