সিডনির আততায়ী ছিল ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪, ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাব বলেন, সিডনির আততায়ী ছিল মানসিক বিকারগ্রস্ত। নিহত অস্ট্রেলীয় সৈনিকদের পরিবারবর্গকে অবমাননাকর চিঠি লেখা থেকে শুরু করে নিজের স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসী তালিকায় নাম ছিল না মন হারুন মোনিসের।
৫০ বছর বয়সি মোনিস উদ্বাস্তু হিসেবে ইরান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসে ১৯৯৬ সালে। ২০১৩ সালে তার ৩০-বছর-বয়সি স্ত্রীকে ১৮ বার ছুরি মেরে হত্যা করা হয় এবং মৃতদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা ঘটে সিডনির পশ্চিমাংশে। মোনিস ও তার বান্ধবী হত্যাকাণ্ডে সহযোগী ছিল, বলে অভিযোগ ওঠে। তা সত্ত্বেও ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন দেন – যদিও মোনিস-এর বিরুদ্ধে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের বহু অভিযোগ ছিল: মোনিস নাকি ‘স্পিরিচুয়াল হিলার’ হিসেবে আধ্যাত্মিক উপায়ে রোগ নিরাময় করার নামে বহু নারীকে যৌন নির্যাতন করেছিল।
কাজেই মোনিস এবার সিডনির কাফেটিতে হামলা চালানোর পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে: এ ধরনের একজন ব্যক্তি কোনোরকম নজরদারি ছাড়াই প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারে কীভাবে? প্রশ্নটি এবার মন্ত্রীসভায় আলোচিত হবে, বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট। তিনি আরও বলেন, অপরদিকে এ ধরনের একটি ‘‘অসুস্থ এবং মানসিকভাবে পীড়িত” ব্যক্তিকেও ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা সম্ভব নয়।
মোনিস সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় ছিল, এমনকি উইকিপিডিয়াতেও তার নামে এন্ট্রি ছিল। দৃশ্যত মোনিস নিজেকে একজন ‘‘শহিদ’ বলে মনে করত। সে নিজেকে বলত মৌলানা। সে যে শিয়া ইসলাম থেকে সুন্নি ইসলামে ধর্মমত পরিবর্তন করেছে, সে’কথাও মোনিস জানিয়েছে তার পোস্টিং-এ। তার এককালীন উকিল অ্যাডাম হুদার মতে মোনিসকে কেউ চিনতো না; তার কোনো গোষ্ঠী কিবা মসজিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না; তার কাজকর্ম সবই ছিল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। হুদার মতে, মোনিস কিছুটা খামখেয়ালি এবং আবেগপ্রবণ হলেও, বিপজ্জনক ছিল না। হুদার পরামর্শ সত্ত্বেও মোনিস মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে; তখন হুদা আর মোনিসকে মক্কেল রাখতে চাননি। এর পর মোনিস আদালতের বাইরে নিজেকে চেইন দিয়ে বেঁধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছে। গত বছর মোনিসকে ৩০০ ঘণ্টা সমাজসেবার দণ্ড দেওয়া হয়।
মোনিস-এর মতাদর্শ যে কী ছিল, তা বলা শক্ত: ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর প্রতি তার আগ্রহ থাকলেও, আনুগত্য কতটা ছিল, তা অজ্ঞাত। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ সিডনির কাফেতে পণবন্দি নেওয়ার ঘটনা ও তার রক্তাক্ত সমাপ্তির পর একদিকে যেমন দুঃখ-বেদনায় বিমূঢ়, অপরদিকে তারা যেন এক নতুন জাতীয় ঐক্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। বিশেষ করে তাদের মুসলিম স্বদেশবাসীদের সঙ্গে সংহতি ও সহানুভূতি প্রকাশে অস্ট্রেলিয়া এবার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত রেখেছে: হ্যাশট্যাগ আই’লরাইডউইথইউ। আর হিজব পরিহিতা মুসলিম নারীরা লিন্ড্ট কাফের সামনে ফুলের তোড়া রেখে যাচ্ছেন।