কুলাউড়ার তাজপুর সেচ প্রকল্প এখন গন্ডারগড় গ্রামবাসীর গলার ফাঁস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪, ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ
কুলাউড়া প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের তাজপুর সেচ প্রকল্পটি এখন গ্রামের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে ওঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত এই সেচ প্রকল্প ও প্রকল্পের ম্যানেজারে উৎপাতে অতিষ্ঠ গন্ডারগড় গ্রামবাসী প্রকল্পটি বন্ধ অথবা সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কুলাউড়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে তাজপুর সেচ প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পটি শুরু করার সময় জমির কোন চুক্তি ছিলো না। ছিলো না প্রকল্পের পানি প্রবাহের কোন নকশা। তাছাড়া প্রকল্পটি তাজপুর সেচ প্রকল্প হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গন্ডারগড় গ্রামে।
সরেজমিন তাজপুর সেচ প্রকল্প এলাকায় গেলে গন্ডারগড় গ্রামের দ্বিজেন্দ্র সেন, গোপাল সেন, ভুপেন্দ্র দেব, খেলা রানী সেন জানান, তাজপুর সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শ্রীকান্ত দে জোর করে তাদের বাড়ির উপর দিয়ে জোরপূর্বক পানি নিতে চান। এনিয়ে গত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বাররা সালিশে বসে পানি সরবরাহ বন্ধ করেন এবং প্রকল্প ম্যানেজারকে বিকল্প ব্যবস্থায় পানি সরবরাহের নির্দেশ দেন।
কিন্তু এবার বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার আগে নিরীহ লোকজনকে হুমকি ধামকি দিয়ে জোর করে পানি নিতে চান। যে স্থানে অর্থাৎ গন্ডারগড়ে যে সেচ পাম্পটি বসানো হয়েছে সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অর্থাৎ বাগৃহাল এলাকার কৃষকদের বোরো চাষের সুবিধার জন্য তাজপুর সেচ প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়। সেখানে তাজপুর গ্রামের কৃষকেরও খুব কম জমি রয়েছে। আর গন্ডারগড় গ্রামের মানুষের কোন বোরো জমি নেই সেখানে।
তাছাড়া গন্ডারগড় গ্রামের মানুষ তাদের কৃষি জমিতে দু’ফসলি জমিতে বোরো চাষ করেন না। বাগৃহালের মানুষের সুবিধার্থে সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শ্রীকান্ত দে গন্ডারগড়ের মানুষ পানি নিতে দিচ্ছে না বলে সেখানকার কৃষকদের উস্কানি দিচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে গত সোমবার দিবাগত রাতের আধারে একদল দুর্বৃত্ত খেলা রানী সেন ও ভুপেন্দ্র দেবের বাড়ির মধ্য দিয়ে খাল খনন করে পাইপ বসানোর চেষ্টা করে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মুক্তিযোদ্ধা দিপ্তী দাস জানান, জোর করে তার জায়গায় সেচ পাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি এব্যাপারে আদালতে একটি মামলা (নং ৮৩/২০১৪) দায়ের করেছেন। এদিকে খেলা রানী সেন ও ভুপেন্দ্র দেবের বাড়ির মধ্য দিয়ে পানি নিতে না পেরে মখলিছ মিয়ার জমি জবরদখল করে পানির নালা খনন করে পানি সেচ শুরু করেছে। এরফলে মুক্তার মিয়া, মখলিছ মিয়া, জালাল মিয়া, কানু লাল ও দক্ষিণার জমি ক্ষতির সাধন করা হয়।
এদিকে সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শ্রীকান্ত দে চলতি বছর ১২ জানুয়ারি উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বরাবরে প্রকল্পের পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতার নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার নির্দেশ দেন উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী। অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রীকান্ত দে জানান, তার প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসবেন জেলা প্রশাসক।
টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আপ্তাব উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শ্রীকান্ত ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে। সে মানুষকে হুমকি ধামকী দিয়ে এলাকায় একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে।
এব্যাপারে কুলাউড়া বিএডিসির উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মনির আহমদ জানান, সেচ প্রকল্পটি স্থাপনকালে জমির কোন ছাড়পত্র ছিলো না। তাছাড়া পানি প্রবাহের কোন নকশা ছিলো না। এলাকাবাসী না চাইলে প্রকল্পটি অন্যত্র স্থানান্তর করা যাবে। পানি নিতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।