রেলপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠন হচ্ছে কনটেইনার করপোরেশন
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ ডিসেম্বর ২০১৪, ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ
রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়াতে পৃথক কনটেইনার করপোরেশন করা হচ্ছে। কোম্পানি আইনের অধীনে করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র কোম্পানি হিসেবে এটি কাজ করবে, এর পরিচালনায় পৃথক পর্ষদ থাকবে।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
রেলপথে পণ্য পরিবহন ক্রমেই কমছে। আমদানি-রফতানি কনটেইনারের মাত্র ৫ শতাংশ এখন রেলপথে পরিবহন করা হয়। ফলে লাভজনক এ খাত থেকে আয়ও কমছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। এ অবস্থায় রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়াতে পৃথক কনটেইনার করপোরেশন করা হচ্ছে। কোম্পানি আইনের অধীনে করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র কোম্পানি হিসেবে এটি কাজ করবে, এর পরিচালনায় পৃথক পর্ষদ থাকবে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রেলপথে পণ্য পরিবহন করা হয় ৩২ লাখ ৮২ হাজার টন। এর মধ্যে কনটেইনার পরিবহন করা হয় ৮১ হাজার ৯৩০ টিইইউএস। ২০১৩-১৪ অর্থবছর রেলপথে পণ্য পরিবহন কমে দাঁড়ায় ২৩ লাখ টন, যার মধ্যে জ্বালানি তেলের পরিমাণই বেশি। কনটেইনার পরিবহন করা হয় ৬২ হাজার টিইইউএস। মূলত অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সময়ক্ষেপণ, পণ্যবাহী ট্রেনের অপ্রতুলতা ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে সড়কনির্ভর হচ্ছে আমদানি-রফতানি কনটেইনার পরিবহন।
এদিকে কয়েক বছর আগেও প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ১০টি কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করত, এখন যা চারটিতে নেমে এসেছে। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন থেকে আয় হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের চার গুণ। একটি কনটেইনারবাহী ট্রেন থেকে রেলওয়ের ৬ লাখ টাকা আয় ও ৪ লাখ টাকা মুনাফা হয়। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস থেকে আয় হয় মাত্র দেড় লাখ টাকা। এর পরও এক ট্রিপে লোকসান হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা।
এ অবস্থায় রেলের আয় বাড়ানো ও লাভজনক করতে পৃথক কনটেইনার করপোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির ঋণ পাওয়ার জন্যও বাধ্যতামূলকভাবে এ-সংক্রান্ত শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। ফলে কনটেইনার করপোরেশন গঠনের উদ্যোগ জোরদার করা হয়েছে।
পৃথক কনটেইনার করপোরেশন গঠনে এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতও নেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কনটেইনার সার্ভিস করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কনটেইনার সার্ভিসকে করপোরেশনে রূপান্তরের প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন ও মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন প্রণয়ন করা হবে। এর পর কোম্পানি আইনের অধীনে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মনসুর আলী সিকদার জানান, রেলওয়ে সংস্কারের অংশ হিসেবে কনটেইনার সার্ভিসকে করপোরেশনে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনুমোদনের পর কোম্পানি আইনের অধীনে করপোরেশন গঠনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ করপোরেশন রেলপথে পণ্য, বিশেষত কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির মাধ্যমে রেলওয়ের আয় বাড়াতে কাজ করবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, করপোরেশন পরিচালনায় গঠিত পর্ষদের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পর্ষদে অপারেশন, বিপণন ও ব্যবসায় উন্নয়ন, অবকাঠামো ও প্রকল্প এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস— চারজন পরিচালক থাকবেন। এছাড়া পদাধিকারবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, এনবিআর, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে থাকবেন।
করপোরেশনের অধীনেই রেলওয়ের সব বিদ্যমান ও ভবিষ্যতে নির্মিতব্য অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) পরিচালিত হবে। কনটেইনার সেবা সম্প্রসারণের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন আইসিডি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করবে এ করপোরেশন।
রেলওয়ের তথ্যমতে, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আমদানি-রফতানি। প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি-রফতানি পণ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে চলাচল করে, যার ৯৫ শতাংশই সড়কনির্ভর। আগামীতে আমদানি-রফতানি আরো বাড়লে শুধু সড়কপথে এ চাপ সামলানো যাবে না। ফলে রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বাড়াতে জোর দিতে হবে। এজন্য পৃথক করপোরেশন প্রতিষ্ঠা জরুরি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তাফাজ্জল হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, কনটেইনার করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ফলে লজিস্টিক সেবার উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া যাবে। ফলে আমদানি-রফতানির সময় কমবে। এতে দেশের আমদানি-রফতানির সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি পরিবহন সক্ষমতা বাড়ায় রেলের আয়ও বাড়বে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, চীন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়ানো যাবে।