কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল নিউ ইয়র্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ ডিসেম্বর ২০১৪, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ থেকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের রেহাই পাওয়ার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কের প্রধান সড়কগুলোতে হাজারো বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নাগরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দিতে মানবাধিকার আইনজীবীরা এগিয়ে এসেছেন। পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেবল কৃষ্ণাঙ্গ নয়, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানাচ্ছেন বিভিন্ন অভিবাসী দল এবং নাগরিক অধিকারের কর্মীরা। কোনো সাংগঠনিক আহ্বান না থাকলেও পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনতার এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত। নারী, পুরুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরাই বিক্ষোভে বেশি অংশ নিয়েছেন। তাঁরা কোথাও কফিন কাঁধে নিয়ে মিছিল করছেন। এসব কফিনে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে নিহত ব্যক্তিদের নাম লেখা আছে। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় মৃতদের মতো শুয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, রায় পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রতিবাদ করেই যাবেন। ১৩ ডিসেম্বর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। ওই সমাবেশে দুই শতাধিক সংগঠন যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা আল শার্পটন বলেন, ১৩ ডিসেম্বরের ওই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আওয়াজ তোলা হবে। বর্ণবৈষম্য, পুলিশি নির্যাতন, বিচারের নামে বৈষম্যের প্রতিবাদে জানানো এই বিক্ষোভ ও আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘২১ শতকের নাগরিক আন্দোলন’।
নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড বরোতে গত জুলাই মাসে অবৈধভাবে সিগারেট বিক্রির অভিযোগে কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গার্নারকে (৪৩) গ্রেপ্তার করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যানিয়েল প্যান্টালিও (২৯)। গার্নার তখন নিরস্ত্র ছিলেন। আটক-প্রক্রিয়ার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত গ্র্যান্ড জুরি গত বুধবার সিদ্ধান্ত দেন, গার্নারকে হত্যার ইচ্ছা ড্যানিয়েল প্যান্টালিওর ছিল না। তাই তাঁকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা যাবে না।
জুরির ওই সিদ্ধান্তের পরেই বিকেল থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। রাতের মধ্যে নিউইয়র্ক হয়ে ওঠে বিক্ষোভের শহর। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসনে গত সপ্তাহেই গ্র্যান্ড জুরির রায়ে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পান শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় সারা দেশে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই নিউইয়র্কের ঘটনায় নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, যখন দেশের কোনো লোক মনে করেন তাঁকে আইনের দৃষ্টিতে সমান চোখে দেখা হচ্ছে না, তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য সহযোগিতা করা তাঁর কাজ। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল এরিখ হোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরিক গার্নারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত করা হবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁকে জানিয়েছেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিউইয়র্ককে শান্তিপূর্ণ রাখতে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিহত কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গার্নারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের তদন্তের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসনে গত সপ্তাহে গ্র্যান্ড জুরির রায়ে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পান শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় সারা দেশে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার অভিযোগ থেকে গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তে অব্যাহতি পেলেন আরেক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা।