প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৮৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০১৪, ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে ৮৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের করা ২৮১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪২ ওভার ১ বলে ১৯৪ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ৪৩তম ওভারে আরাফাত সানির বলে টেন্ডাই চাতারা বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলে কাঙ্খিত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
এর আগে ৪০তম দলীয় ১৮০ রানে জিম্বাবুয়ের নবম উইকেটের পতন হয়। সাকিবের করা ওই ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে মাহমুদুল্লাহ হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জন নিয়ুমবু। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ৪ রান।
নিয়ুমবুর উইকেটটির মধ্য দিয়ে সাকিব ম্যাচে নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করেন। এর মধ্য দিয়ে সাকিব একদিনের ক্রিকেট ইতিহাসের ১২তম খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে শতক ও চার উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের মতোই বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শিশির ভেজা সন্ধ্যায় সতীর্থরা যখন একের পর এক ক্যাচ ও ফিল্ডিং মিস করে যাচ্ছিলেন তখনই ৩ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি ফেরান সাকিব।
অষ্টম ওভারে দলীয় ৪৭ রানে জিম্বাবুয়ের প্রথম উইকেটের পতন হয়। সাকিবে করা ওই ওভারের তৃতীয় বলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা (১৫) স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এক বল পর রুবেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ভুসি সিবান্দাও (০)।
এরপর ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৯২ রানে জিম্বাবুয়ের আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হ্যামিলটন মাসাকাদজা (৪২) লেগ বিফোর উইকেটের (এবিডব্লিউ) ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরত পাঠান মাহমুদুল্লাহ।
২৫তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন অফস্পিনার মাহমুদুল্লাহ। এবার তার শিকার রেগিস চাকাভা। ওভারের চতুর্থ বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে চাকাভা করেন ৯ রান।
এরপর ৩০তম ওভারে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ব্রেন্ডন টেইলরকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে ‘স্বস্তি’ এনে দেন মাশরাফি। ওভারের চতুর্থ বলে টেইলরের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে তালুবন্দি করেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। টেইলর ৭২ বলে ৫৪ রান করেন।
৩৪তম ওভারে দলীয় ১৫৩ রানে জিম্বাবুয়ের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন হয়। নিজের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই সফরকারীদের অধিনায়ক এলটন চিগুমবুরাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে চিগুমবুরা করেন ১৫ রান।
এরপর ৩৬তম ওভারে দলীয় ১৬৮ রানে সলোমন মিরেকে বোল্ড করে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মিরে করেন ১১ রান।
পরের ওভারেরই দলীয় ১৭০ রানে জিম্বাবুয়ের অষ্টম উইকেটের পতন হয়। নিজের করা সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি। পানিয়াঙ্গারা করেন ৭ রান।
এর আগে সাকিবের সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৮১ রান করে টাইগাররা।
৯৯ বলে ১০১ রান করেন সাকিব। লড়াইয়ের মতো স্কোর গড়তে ৬৫ রান করে মুশফিকও অবদান রাখেন। আর শেষের দিকে অভিষিক্ত সাব্বিরের ২৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি ছিল এক কথায় দুর্দান্ত।
৭০ রানে ৪ উইকেট পতনের পর ইনিংসের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিক। ১৪৮ রানে জুটি গড়ে দলকে নিরাপদ সীমায় পৌঁছে দেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
২১৮ রানের মাথায় পানিয়াঙ্গারার বল তুলে মারতে গিয়ে সীমানায় কামুনগোজির তালুবন্দি হন সাকিব। তবে তার আগেই শতক পূর্ণ করে দলকে দিয়ে যান একটা ভিত্তি।
আর এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ ব্যাট করে যান মুশফিক। ৪৭ ওভার ২ বলের সময় মুশফিক যখন আউট হন বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২৪৬ রান।
পরে ব্যাট করতে আসেন সাব্বির রহমান। ৩ ছয় আর ৩ চারে সাজানো ২৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন এ ডানহাতি।
এর আগে দুপুরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৩০ রানের মধ্যেই স্বাগতিকরা হারায় তিনটি উইকেট।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হয়ে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। দলের রান তখন মাত্র ৮।
ইনিংসের দশম ওভারে ২৬ রানের মাথায় চাতারার বল তুলে মারতে গিয়ে চিগুম্বুরার হাতে বল তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়েন এনামুল হক (১২)। এরপর ৩১ রানে আবারও আঘাত হানেন চাতারা। দ্বাদশ ওভারে চাতারার বলে ১ রান করে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। বিপর্যয়ে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
খানিক পরে ৭০ রানের মাথায় ৩১ রান করে মমিনুল হক ফিরে গেলে হতাশা পেয়ে বসে বাংলাদেশের সমর্থকদের। তবে সাকিব আর মুশফিক মিলে সেই হতাশা কাটান।
৬৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সফল বোলার পানিয়াঙ্গারা। চাতারা ২টি এবং নিয়ুমবু ও কামুনগোজি নেন ১টি করে উইকেট।
টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ওয়ানডেতে বছরের প্রথম জয়ের লক্ষ্যে শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। নতুন অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে দিন শেষে কাঙ্ক্ষিত সে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।