৩ কাশ্মিরী হত্যার দায়ে ৭ ভারতীয় সৈন্যের যাবজ্জীবন সাজা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ নভেম্বর ২০১৪, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের মাচিলে তিনজন নিরীহ যুবককে ভুয়ো এনকাউন্টারে হত্যা করা আর তাদের সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করার জন্য দুজন অফিসার-সহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মোট সাতজন সদস্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
আর্মির কোর্ট মার্শালে দোষী এই সাতজনের সব সুযোগ-সুবিধাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যে ধরনের অত্যাচার হয়েছিল, যার পরিণামে আজও অজস্র গণকবর ছড়িয়ে আছে। অবস্থাটা সেদিকে যাচ্ছে বুঝেই কাশ্মীর প্রতিবাদ করেছিল, বুঝিয়ে দিয়েছিল তাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
সাড়ে চার বছর আগে মাচিলে ওই তিন যুবকের হত্যার প্রতিবাদে কাশ্মীর প্রায় দুমাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
দোষী সেনা সদস্যদের সাজা ঘোষণার পর গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, এরপর এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে আর কেউ সাহস করবে না বলেই তার আশা।
ঘটনাটা ২০১০ সালের ৩০শে এপ্রিলের। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় মাচিল সেক্টরে তারা তিনজন অনুপ্রবেশকারীকে গুলি করে মেরেছে, যারা পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিল।
কিন্তু পরে জানা যায়, ওই তিনজনই বারামুল্লা জেলার বাসিন্দা – শাহজাদ আহমদ খান, রিয়াজ আহমদ লোন আর মুহাম্মদ শফি লোন। ঘটনার দিনতিনেক আগে থেকেই তারা নিখোঁজ ছিল।
তাদের পরিবার জানায় চাকরি আর টাকাপয়সার টোপ দিয়ে সেনারাই তাদের সীমান্তের কাছে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে জঙ্গী বলে তাদের খতম করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা সামনে আসার পর কাশ্মীর যে তুমুল প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, উপত্যকায় তা বহু বছরের মধ্যে দেখা যায়নি।
হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতাদের পাশাপাশি কাশ্মীরী যুবকদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গ্লোবাল ইয়ুথ ফেডারেশন সে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
তাদের প্রধান সংগঠক তৌসিফ রানা বলছিলেন, ”সে সময় এটা যেন সেনাদের রুটিনে পরিণত হয়েছিল। তারা যা খুশি তাই করতে পারে। এখানে গণধর্ষণ, ওখানে গণহত্যা লেগেই ছিল। আর কাশ্মীর তাই জ্বলে উঠেছিল।
মাচিলের ঘটনার পরবর্তী প্রতিবাদ, পাথর ছোঁড়া বিক্ষোভ চলেছিল টানা কয়েক মাস ধরে। সংঘর্ষে মারা গিয়েছিলেন প্রায় শতাধিক কাশ্মীরী।
সেই ঘটনার সাড়ে চার বছর পর, দশ মাস ধরে শুনানি করে ভারতীয় সেনা আদালত এদিন জানাল অভিযুক্ত সাতজন সত্যিই দোষী। নির্দোষ যুবকদের জঙ্গী বানিয়ে তারা ওই খতমের নাটক সাজিয়েছিলেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, এই রায়ের পর হয়তো কাশ্মীরে সেনা ও বেসামরিক মানুষের সম্পর্ককে আরও বিষিয়ে তোলার চেষ্টা হবে, কিন্তু সেনাদের তাতে বিচলিত হওয়ার কথা নয়।
সেনা আদালত তাদের রায় ঘোষণা করলেও সেই সাজা অবশ্য এখন নর্দার্ন আর্মি কমান্ডারকে অনুমোদন করতে হবে, তারপর তা চূড়ান্ত সম্মতির জন্য আসবে ভারতীয় সেনার সদর দফতরে।
দোষী সেনা সদস্যরা আপিল করতে পারবেন বেসামরিক আদালতেও। ফলে মাচিলের ঘটনায় চূড়ান্ত বিচারের জন্য অপেক্ষা কিন্তু এখনই ফুরোচ্ছে না।