টানা হরতালে বিপাকে চাষী-ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ নভেম্বর ২০১৪, ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ
জামায়েতের ডাকা টানা হরতালে রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব চোখে না পড়লেও গ্রামাঞ্চলে যারা বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন এ মৌসুমে হরতাল দেয়ার কারণে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সবজি চাষী, হ্যাচারি-পোল্ট্রি খামারিদের হরতালের কারণে তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে এরই মধ্যে।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বাংলাদেশে শীতকাল শুরু না হলেও বাজারে এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি এবং ফলমুল। সাম্প্রতিককালে আগাম চাষের কারণে ঋতু শুরুর আগেই এসব সবজি বা ফলমূল আসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণার প্রেক্ষিতে গত রোববার থেকে মাঝখানে একটি দিন বাদ দিয়ে সপ্তাহ জুড়ে চারদিন হরতালের ফলে, বিপাকে পড়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
একদিকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে। অন্যদিকে বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে কিংবা পচে যাচ্ছে অনেক পণ্য।
অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে হরতাল প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
হরতালে রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব চোখে না পড়লেও গ্রামাঞ্চলে যারা বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন তারা বলছেন, এ মৌসুমে হরতাল দেয়ার কারণে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের আক্কেলপুর ইউনিয়নের একজন ডিম ও মুরগির খামারি আব্দুল গনি। স্থানীয় শেফালি হ্যাচারি অ্যান্ড পোল্ট্রি খামারের এই খামারি বলছেন, হরতালের কারণে তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে এরইমধ্যে।
আমাদের মুরগীর ব্যবসা এবং ডিমের ব্যবসায় মোটামুটি ধ্বস নেমেছে। গত আটদিনে মুরগির দাম ১৬০/১৬৫ টাকায় নেমে এসেছে। ডিমের দাম ছিল আট টাকা – সেটি এখন ছয় টাকা হয়ে গেছে। গনি বলেন, “আমাদের মুরগীর ব্যবসা এবং ডিমের ব্যবসায় মোটামুটি ধ্বস নেমেছে। গত আটদিনে যে বাজার ছিল তাতে মুরগির দাম ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা, সেখানে ১৬০/১৬৫ টাকায় নেমে এসেছে। ডিমের দাম ছিল আট টাকা সেটি এখন ছয়টাকা হয়ে গেছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় তা অনেক কম। নব্বইভাগ খামারি এখন এই অবস্থায় লোকসানে আছে”।
তিনি জানান অবিক্রিত প্রচুর মুরগি এবং ডিম রয়েছে তাদের খামারে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে প্রচুর ডিম নষ্ট হয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতির আশংকা করছেন তার মত আরো অনেক খামারী।
হরতালে বড় একটি প্রভাব পড়ছে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের ওপর । পণ্য পরিবহন সমস্যার কারণে পচনশীল অনেক পণ্য নিয়েই বিপাকে রয়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা।
পাবনা সিরাজগঞ্জ সহ আশেপাশের এলাকার দুগ্ধ খামারীদের মধ্যে আশংকা তৈরি হয়েছে হরতালকে ঘিরে। পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার একজন দুগ্ধ খামারী হাজি রফিকুল ইসলাম জানান, পরিবহন সংকটের কারণে সবজিসহ পচনশীল পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না তারা। একই সাথে পণ্য কেনারও লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রচুর দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরপর হরতাল দেয়ায় এভাবেই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “হরতাল হলে পরে কোম্পানি দুধ নেয় না। ফলে বাইরে আমাদের অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিতে হয়। আর এত দুধ তো বাজারেও বিক্রি করা যায় না। এসব কারণে অনেক সময় দুধ ফেলেও দিতে হয়”।
হরতাল হলে কোম্পানি দুধ নেয় না। ফলে বাইরে আমাদের অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিতে হয়। আর এত দুধ তো বাজারেও বিক্রি করা যায় না। এসব কারণে অনেক সময় দুধ ফেলেও দিতে হয়
এই দুগ্ধ ব্যবসায়ী আরও জানান, প্রতিদিন দশ মণ দুধ আসে তার খামারে। যা ব্রাক ও এ মিল্ক ভিটার কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু হরতাল হলে তারাও এই দুধ কিনতে আগ্রহী হন না।
এ ধরনের সংকটে পড়তে হয় সব্জি চাষী থেকে শুরু করে কৃষি খাতের সাথে জড়িত সব উৎপাদনকারীকেই। কারণ তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলোকে পাঠাতে হয় রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তের মানুষদের কাছে।
টানা দুদিনে হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে আজ বুধবার থেকে আবার শুরু হচ্ছে হরতাল। চাষী ও খামারীরা বলছেন, উৎপাদিত সবজি দেশের অন্যান্য প্রান্তে পৌঁছে দিতে না পারলে এবং কেনার মত লোক না থাকায় সেগুলো মাঠেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা। ফলে অর্থনৈতিকভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে সেটা কিভাবে পুষিয়ে নেবেন সেটাই শংকায় ফেলে দিচ্ছে তাদের।