তুলির শেষ আঁচড় পড়ছে লাল বর্ণের দুর্গা দেবী প্রতিমায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল ::
উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ লাল বর্ণের দুর্গা দেবীর পূজা হয় রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে। এখন চলছে শেষ বেলার তুলির কাজ। দেশ-বিদেশের লাখো ভক্তবৃন্দ আসেন দেবী দর্শনে, কৃপার আশায়। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পরিবার পরিজন নিয়ে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন পাঁচগাঁওয়ের এ মণ্ডপে।
রাজনগর উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের পাশে অবস্থিত এ মণ্ডপে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধশত সদস্যের একটি বিশাল টিম। পুলিশের পাশাপাশি টহল দেয় র্যাব সদস্যরাও। এ বছর রাজনগর উপজেলায় ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন মিলে ১২৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ পূজা শুরু হয়ে ৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে।
এদিকে রাজনগরের পাঁচগাঁও মণ্ডপে লাল দুর্গা দেবীর পূজো দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন ভিড় জমান। আসেন মন্ত্রী, এমপি, চলচ্চিত্র শিল্পীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কুশল বিনিময় করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। মণ্ডপের পাশে বসে মেলা। হরেক রকমের ৪ শর বেশি দোকান বসে।
ইতিমধ্যেই পূজা উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে উপজেলার পূজামণ্ডপ ও আশপাশের এলাকা। রাজনগর থানা সূত্রে জান গেছে, প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে । শুধু পাঁচগাঁও মন্দিরে পুলিশ ও আনসার মিলে অর্ধশত সদস্যের একটি টিম নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
পাঁচগাওয়ের লাল বর্ণের দুর্গা মূর্তির নিয়ে কথিত আছে, প্রায় তিনশ বছর পূর্বে সর্বানন্দ দাশ তৎকালীন সরকারের মুন্সী পদবি প্রাপ্ত কর্মস্থল আসামের শিবসাগর জেলার বাড়িতে দুর্গাপুজার সময় তার স্ত্রী ও কর্মচারীগনকে নিয়ে কুমারী পুজা করার মনস্থ করেন। মন্দিরের সেবায়েতের সহায়তায় সর্বানন্দ দাস পঞ্চম বর্ষীয়া কুমারী নির্বাচন করেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে সুদীর্ঘ ছয় ঘণ্টা পুজা করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন, কুমারীর গায়ের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছেন। এই দৃশ্য অবলোকন করার পর মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা’ আমার পুজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি? উত্তরে ভগবতী বলেন, ‘হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাচঁগাঁও-এর পূজা ম-পে আর্ভিভূত হয়েছিলাম। এখন হতে ভগবতীকে লালবর্ণে পূজা করবে।’ পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় পূজার আয়োজন করেন। মাতৃমূর্তিকে কুমারী গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও সর্বানন্দ দাসের পরবর্তী বংশধর সঞ্জয় দাসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিজেদের ম
ণ্ড-পে লাল বর্ণের মূর্তির দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়।
পাঁচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পূজা উদযাপন পরিষদের ওই ইউনিয়নের সভাপতি মিহির কান্তি দাশ মঞ্জু জানান, প্রতিবছরই এ মণ্ডপসহ পূজা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নির্বাহী অফিসার ও ওসি সহ বিশেষ আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়। র্যাব, পুলিশসহ নিরাপত্তার কাজে বিভিন্ন সেক্টরের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।