চলে গেলেন নজরুলের গানের পাখি ফিরোজা বেগম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৪:০৬ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মৃত্যু হয় ৮৪ বছর বয়সী এই শিল্পীর।
ফিরোজা বেগম কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। হৃদযন্ত্রেও জটিলতা ছিল। তার মৃত্যুর খবরে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
শিল্পীর ছেলে হামিন আহমেদ জানান, তার মায়ের মরদেহ রাতে হাসপাতালের হিমঘরে রেখে সকালে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্দিরা রোডের বাসায়। বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
বিকালে গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে শিল্পীকে।
১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলার রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক জমিদার পরিবারে ফিরোজা বেগমের জন্ম। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন আইনজীবী। মা কওকাবন্নেসা বেগমও ছিলেন সংগীতের অনুরাগী।
ফিরোজা যখন গানের জগতে প্রবেশ করেন তখনকার বাঙালি মুসলমান সমাজে মেয়েদের সংগীতের তালিম নেয়া সহজ বিষয় ছিল না। কিন্তু বয়স দশ বছর পেরুনোর আগেই তার কণ্ঠে নিজের গান শুনে মুগ্ধ হন খোদ কবি নজরুল ইসলাম।
অল ইন্ডিয়া রেডিওর সুনীল বোসের উৎসাহে মামার সঙ্গে নামজাদা গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভিতে অডিশন দিতে গিয়ে কবির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ফিরোজার। নজরুল তখন এইচএমভির প্রধান প্রশিক্ষক।
ফিরোজার কণ্ঠে ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা শুধু চোখে দেখা দিতে এস না’ শুনে নজরুল সেদিন বলেছিলেন- এই মেয়ে অনেক ভালো শিল্পী হবে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়েই অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ফিরোজার কণ্ঠে নজরুলের গান দুই বাংলায় সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। শৈশবের সেই দিনগুলোতে নজরুলের কাছ থেকেই তার কয়েকটি গানের তালিম পেয়েছিলেন ফিরোজা বেগম। তার কণ্ঠের গান দিয়েই শুরু হয় নজরুলসংগীতের একক লং প্লে প্রকাশ।
১৯৫৫ সালে সুরকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় ফিরোজার। নজরুলের সরাসরি সংস্পর্শে আসা কমল বিদ্রোহী কবির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গানে সুর দিয়েছেন। ফিরোজা নিজেও পরে নজরুলের গানের স্বরলিপি তৈরি করেন; সুর সংরক্ষণে ভূমিকা রাখেন।
নজরুলসংগীত ছাড়াও ফিরোজার কণ্ঠ থেকে ভক্তরা শুনেছে রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি ও ভজন। বিভিন্ন দেশে তিন শতাধিক একক অনুষ্ঠানে গান করেছেন তিনি। ১৯৪৯ সালে ফিরোজা আর তালাত মাহমুদের গাওয়া গানেই ঢাকা শর্ট ওয়েভ রেডিওর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিরোজা বেগম। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পদকসহ দেশে-বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ টিভি শিল্পী পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, সত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কার ও নজরুল আকাদেমি পদক।
তিন ছেলে তাহসিন, হামিন ও শাফিন আহমেদ এবং অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন শিল্পী ফিরোজা বেগম।