ধর্মরক্ষার নামে যথেচ্ছাচার রুখে দাঁড়ান শ্রীমঙ্গলবাসী!
প্রকাশিত হয়েছে : ২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ
মুস্তাকিম আজিজ ইভান::
শ্রীমঙ্গলের মতো একটা অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের মানুষের শহরেও ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে জনসভায় প্রথমে ছাত্রলীগের একাংশ হামলা করে আর এরপর তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সারাদেশে চলতি সুবিধাবাদের আশ্রয় নেয়৷ জাবেদ ভাই এবং রিয়াজ ভাই সহ সবাইকেই আহত করেছে এরা এবং প্রীতম হিন্দু পরিবারে জন্ম হওয়ায় এই জিনিসটাও কাজে লাগানো হচ্ছে, সে নাকি ধর্ম অবমাননা করেছে৷ এসব জিনিস যদি দল মত ধর্ম জাতি নির্বিশেষে শ্রীমঙ্গলের মানুষ রুখে দাড়াতে না পারেন এই মুহুর্তে তাহলে একটা সময় যার সাথেই বিরোধ হবে তাকেই হামলা করা হবে এবং ধর্মকে তাদের নিত্যদিনের ব্যবহারের একটি মারণাস্ত্রে পরিণত করে এরা আগাতে থাকবে৷ একটা সময় গোটা শহরে হিন্দু মুসলমান বাঙালি মনিপুরি কেউই আর বাদ থাকবেন না।
অথচ এই প্রীতম, আর রিয়াজ ভাইরা শ্রীমঙ্গলের জন্য মাহামারীর সময়ে সারা শহরের মানুষের জন্য সাধ্যমতো লড়াই করেছেন, সিলেটের বন্যায় তারা সবাই ত্রান জড়ো করে বহু কষ্ট করে এসেছেন সিলেটের পাশে দাড়াতে।
যদি এসব চলতে থাকে তাহলে একটা সময় কথা কাটাকাটি হলেই দেখা যাবে একদল বলছে অমুক লেখকের গল্প কেন পড়েছিস, তুই ইসলামের অবমাননা করেছিস৷ এই জিনিসটা সাধারণ মুসলমানেরা কখনই করতে দেখিনি, সব সময় সারাদেশে এই পর্যন্ত যে কটা সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ আর লুট হয়েছে দেখা গেছে তার পেছনে ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে এবং ইসলাম ধর্ম তাদের কাছে ঠুনকো আর যাচ্ছেতাইভাবে অপব্যবহারের একটি বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে৷ সাধারণ মানুষকে এসে বলে দিলেই হল প্রীতম দাস নামে এক হিন্দুর বাচ্চা আমাদের ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করেছে, ব্যাস এরপর কি করল, কিভাবে করল আদৌ করল কি না আর কিছুই জানার প্রয়োজন নাই। কোন ধর্মীয় ফ্যানাটিক নয়, কোন রাজনৈতিক দল নয়, হঠাৎ করে ভূইফোর কজন এসেই একটা গুজব ছড়িয়ে দিল এবং শুরু করে দিল লুটপাট, এই দৃশ্য এদেশে এই পর্যন্ত এক দুবার হয় নি। ধর্মের বাস্তবিক অবমাননা যদি কেউ করে থাকে তাহলে এরা করছে, ধর্মকে তাস খেলার একটা তাস হিসাবে ব্যবহার করে এটাকে একটা তামাশার জিনিসে এরাই পরিণত করেছে, সমাজে ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদেরকে লুটপাট করা, রাজনৈতিক হীনস্বার্থে তাকে ব্যবহার করা ছাড়া এসবের আর কোন উদ্দেশ্য নেই এটা এতদিনে সারাদেশের বহু মানুষের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
প্রিয় শ্রীমঙ্গলবাসীর সকলকে সতর্ক থাকার এবং মজলুমের পাশে থাকার আহ্বান জানাই, ধর্মবিস্বাসী জনগন হুট করে যেকোন হল্লা শুমলেই কেবল আজ নয় কখনই বাস্তবতা না জেনে ধর্মের প্রকৃত অবমানকারী, যথেচ্ছভাবে ধর্মকে তুরুপের তাস বানানো লোকজনকে চিহ্নিত করুন কেননা দিনশেষে যা হবে সেটা হল আমাদের শহরটি একটা বসবাসের অযোগ্য স্থানে পরিণত হওয়া, কয়েকজন সামাজিক দুষ্কৃতিকারীর কারণে একটা কমিউনিটি সাম্প্রদায়িক, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠা৷ এটা কোন দলীয় সমস্যা নয়, এটা সমাজে প্রচলিত একটা অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস যা এখন যেকোন দুষ্কৃতিকারীই ব্যবহার করতে চাইছে, সারাদেশে সরকারদলীয় দুষ্কৃতিকারীরাই এই অপকৌশল ব্যবহারে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে আছে।
শ্রীমঙ্গল শহর তার অসাম্প্রদায়িক এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য সব সময় দেশে প্রসংশা কুড়িয়ে এসেছে, একটা পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানকার মানুষ সেই সুবাদে কিছু উপার্জনেরও পথ পেয়েছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব দ্রুতই শহরটা তার সৌন্দর্য হারাবে, একটা অস্থির সমাজ গড়ে উঠতে থাকবে আর একটা সময় মানুষ মানুষের পাশে দাড়াতেও ভয় পাবেন এইসমস্ত গুটিকয়েক সমাজবিরোধী মানুষদের কারণে। সমাজের দায়িত্বশীল সকলেই ব্যাপারটা এখনই রুখে দিতে না পারলে পরিস্থিতি খারাপ হবে কেননা এরা কি রকম মিথ্যাচার আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এল একটা অঞ্চলকে নষ্ট করছে সারাদেশেই আমরা সেসব ভালই জানি।