আইনজীবী সুজন হত্যার নেপথ্যে ‘মিসকিলিং’
সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহ ভেবে হত্যা করা হয় আইনজীবী সুজনকে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২:২২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারে তরুন আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যার তিনদিনের মাথায় হত্যাকান্ডের জট খুলেছে। ব্যাংকের এক সিকিউরিটি গার্ডকে হত্যার জন্য নিযুক্ত করা ‘ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীরা চেহেরার সাথে মিল দেখে হত্যা করেছে অ্যাডভোকেট সুজনকে। এ ঘটনার সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীকে পুলিশ আটকের পর সুজন হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী এলাকার সামসুল হকের ছেলে নাজির মিয়া ওরফে মুজিবের সাথে অগ্রণী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড একই এলাকার মিসবাহর পূর্ব বিরোধ ছিল। মুজিব তার প্রতিপক্ষ মিসবাহকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন। এজন্য রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানের মনা নাইডুর ছেলে দুধ ব্যবসায়ি লক্ষণ নাইডুর সহযোগিতায় কয়েকজন লোক ভাড়া করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী এলাকার বাসিন্দা মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া মুজিব (২৫), রঘুনন্ধনপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ মিয়া (২৭), দিশালোক এলাকার বাসিন্দ হোসাইন আহমদ সোহান (১৯), রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের লক্ষণ নাইডু (২৩) ও নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার বাসিন্দা আব্দুর রহিম (১৯)।
ভাড়াটে লোকজন ও লক্ষণ নাইডুর কাছে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুজিব মুঠোফোনের মাধ্যমে র্টাগেট মিসবাহ’র ছবি পাঠায়। ঘটনার দিন ভাড়াটে হত্যাকারীরা মৌলভীবাজার শহরের গীর্জাপাড়াস্থ শল্পি ও বাণিজ্য মেলায় একটি ফুচকার দোকানের সামনে আইনজীবি সুজনকে দেখে তাদের র্টাগেট মিসবাহ মনে করে। তারা টার্গেটের ছবির ব্যক্তির সাথে মিল থাকার বিষয়টি মূল পরিকল্পনাকারী মুজিবকে জানালে ভিডিও কলের মাধ্যমে সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে মারতে বলেনে মুজিব। তার নির্দেশ পেয়েই দুষ্কৃতিকারীরা সুজন মিয়ার ওপর ঝাপিয়ে পরে ধারলেঅ ছুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত সুজন মিয়াকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে আইনজীবী হত্যাকান্ডের পর পুলিশ আসামী শনাক্তে ঘনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে একাধিক টিম তদন্তে নামে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পুলিশ সুপার (এসপি) এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ সক্ষম হয়েছে জানিয়ে এসপি বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী মুজিব তার পাশের বাড়ির একটি ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল। তাকে ‘শিক্ষা’ দিতে ভাড়াটিয়া খুনি নিয়োগ করে মুজিব। মুজিবের পূর্বপরিচিত লক্ষণের মাধ্যমে এসব খুনির সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং মুজিব মোবাইল ফোনে টার্গেটের (মিসবাহের) ছবি পাঠায়। গত ৬ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আইনজীবী সুজন মিয়াকে মিসবাহ ভেবে ‘ভুল’ করে তাকে ভিডিও কলে দেখিয়ে নিশ্চিত করে খুনিরা। এ সময় মুজিব ফোনে নির্দেশ দেন, ছবির সঙ্গে মিল আছে তো, মারো!। এরপরই চেয়ারে বসা অবস্থায় সুজন মিয়ার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ১০ থেকে ১২ জন দুষ্কৃতিকারী।
ঘটনায় ৮ এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় নিহতের ভাই এনামুল হক সুমন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বুধবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, সদর মডেল থানার ওসি গাজী মো. মাহবুবুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি জাফর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।