ন্যায্য ভাড়ার তালিকা, স্থায়ী স্ট্যান্ড প্রদান ও ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ বন্ধের দাবি
মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪:৪০ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ঐক্যবব্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবানে মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন মোস্তফাপুর-গোবিন্দশ্রী আঞ্চলিক কমিটির ১ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন সেবকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্ত ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস। এছাড়াও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সুহেল মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, রিকশা শ্রমিকনেতা মোঃ দুলাল মিয়া, আব্দুল হালিম, আরশাফ উদ্দিন, মিজানুর রহমান, খোকন মিয়া প্রমূখ। সম্মেলনে বক্তারা বলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে ভিটেমাটি হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে এসে বাধ্য হয়ে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। তার উপর সময়ে সময়ে শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। কখনো বিদ্যুত অপচয়, কখনো দুর্ঘটনাসহ নানা অজুহাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ চালানো হয়। অথচ খোদ সরকারের বিআরটিএ’র প্রতিবেদনে জানুয়ারি মাসের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র হতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। বিআরটিএ’র প্রতিবেদনে জানুয়ারি মাসে মোট ৫১১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন নিহত হন, যার মধ্যে সর্বাধিক ২২০ টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ১৯ টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তারপরও ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই দরিদ্্র শ্রমিকদের পেটে লাথি মারার জন্য রিকশা উচ্ছেদ চালানো হয়। রাষ্ট্র শ্রমিকদের পেটে ভাত দিতে পারে না, আবার শ্রমিক নিজ উদ্যোগে রুটিরোজীর ব্যবস্থা করলে সেখানে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। কেউ শখ করে রিকশা চালানোর মতো কঠিন পেশায় আসতে চায় না। নিতান্ত পেটের দায়ে পড়ে এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। শ্রমিকদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকলে রিকশা চালানোর প্রয়োজন পড়তো না। একদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অবৈধ বলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত এসকল রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রিতে কোন বাঁধা নেই, এমন কি এখনও শোরূম খোলে এসব পরিবহণ বিক্রি হচ্ছে। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারিচালিত রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা পৌর কতৃপক্ষ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। সম্মেলন থেকে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ, বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ, যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন, রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে মোঃ জসিমউদ্দিন সেবককে সভাপতি ও মোঃ মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন মোস্তফাপুর-গোবিন্দশ্রী আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়।