জমে উঠেছে শেরপুর মাছের মেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর তীরে শেরপুর বাজার। এর দক্ষিণ মাঠে অস্থায়ী সারি সারি দোকানে নানা জাতের বড় বড় মাছ। আকর্ষণের কেন্দ্রে একটি বিশাল আকারের বাগাড়, যদিও এ মাছকে মহাবিপন্ন হিসেবে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। রয়েছে বোয়াল, আইড়, চিতল, কাতলা, রুই প্রভৃতি।
মাছের এই ‘মেলা’ বসেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরে। আয়োজকদের মতে, সেখানকার শতবর্ষী এ মেলা। পৌষসংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিবছরের মতো গত রোববার রাত থেকে কুশিয়ারা নদীর তীরে শুরু হয়েছে এই মেলা। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাছ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। দুদিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে মঙ্গলবার।
এবারের মেলায় সবচেয়ে দৃষ্টি কেড়েছে ২ মন ওজনের বিশালাকৃতির বাঘাইর মাছ। এই মাছটি দেখতে রীতিমতো ভিড় জমেছে সেখানে। ভিড় সামলিয়ে বিক্রেতা রফিক আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় মাছটির ওজন ও দাম সম্পর্কে। তিনি জানান, মাছটির ওজন অন্তত ২মণ হবে। দাম জানান আড়াই লাখ টাকা। দর্শনার্থীদেরও মধ্যে অনেক প্রবাসী ও ধনাট্যদের মাছটির দর দাম করতে দেখা যায়। বিশালাকৃতির এই বাঘাইর মাছটি দুদিন আগেই কুশিয়ারা নদীতে থেকে ধরা হয়েছে বলে জানান ওই বিক্রেতা। মেলায় এরকম আরও অনেকগুলি বাঘাইর মাছ দেখা গেছে। তবে দাম আকাশচুম্বি হওয়ার কারেণ সাধারণ মানুষের স্বাধ্যের বাহিরে।
মেলায় কুশিয়ার নদী থেকে ধরা ছোট-বড় বুয়াল ও বাঘাইড় মাছের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা বিক্রেতা মবু মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আশা করি বিক্রি ভাল হবে। মাছের দাম আকাশচুম্বি এমন অভিযোগ মানতে নারাজ এই বিক্রেতা।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, প্রায় ১০০ বছর ধরে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় এই মাছের উৎসবের। এবারের মেলায় সর্বোচ্ছ আড়াই লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়েছে একটি বাঘাড়ের দাম। কুশিয়ারা নদীর তীরে শেরপুর বাজারের দক্ষিণ মাঠে এ মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। গত রোববার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছের আড়ৎদাররা মাছ নিয়ে এসেছেন। মজুত করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাছ বিক্রি হবে। মাছের পাশাপাশি মেলায় বড় বড় দোকানে নানা ধরনের গৃহস্থালি ও বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়েও বসেছেন অসংখ্য দোকান।
মেলায় আগত মৎসব্যবসায়ী অদন পাল বলেন, ঐতিহ্যবাহী মেলায় আমরা প্রতি বছর আসি, এখান থেকে পাইকারি মাছ কিনে আমরা স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করি। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি বাজারে মাছের মেলা বসে।
হবিগঞ্জ থেকে আগত মৎসব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, এই মেলায় আমাদের বাপ দাদারাও মাছ বিক্রি করেছেন। এখন আমরা মাছ বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে পাইকারি মাছ কিনে মৌলভীবাজার, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান পৌস সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছ বিক্রি করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে বাঘাইড়, বোয়াল, আইড়, চিতল, কাতলা, রুই ইত্যাদি মাছ বেশি বিক্রি হয়।
মেলায় আগত দর্শনাথী ফরহাদ রেজা বলেন, শেরপুর মাছের মেলায় প্রথম এসেছি। মেলায় না আসলে এতো বড় বড় মাছ কখনও দেখা হতোনা। এই মেলা শতবছর ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
মেলার ইজারাদার মো: কর্নেল আহমদ আহমদ জানান, মূল মেলা সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে। তবে সরকার কর্তৃক মেলার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা বরাদ্ধ না থাকায় আমরা জায়গা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। তার আশা এবছর মেলায় অন্তত ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্রয়-বিক্রয় হবে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শতবর্ষী মেলা উপলক্ষে যাতে কোন অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য তিন স্তরের
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যাতে জুয়ার বোর্ড বসাতে না পারে এজন্য কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়াও পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে মাছের মেলা। বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে বাজারে এসেছেন বিক্রেতারা। এসব বড় বড় মাছ দেখতে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শ্রীমঙ্গলের লোকজন। কেউ মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ আবার বড় মাছ দেখে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবছর বড় মাছের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই। মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছের মেলায় সাজিয়ে রাখা মাছের মধ্যে ছিলো বড় আকারের রুই, চিতল, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, বাউশ, গ্রাস কার্প, বোয়াল, পাবদা, শোল, গজার, তেলাপিয়া, আইড়, কমন কার্প (কার্পু), বাঘ মাছসহ নানা জাতের মাছ।