মৌলভীবাজারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই মাসে ১১ জনের প্রাণহানী
প্রকাশিত হয়েছে : ২ জানুয়ারি ২০২৫, ৬:৫৩ অপরাহ্ণ
আজিজুল ইসলাম রিয়াদঃ মৌলভীবাজারে বিভিন্ন স্থানে গত দুই মাসে ১০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ১১ জন মারা গেছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগ বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে হেলমেট না থাকা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা, রাস্তার ত্রুটি এসব বিষয়কে দায়ী করছেন সচেতনমহল।
গত ১৩ নভেম্বর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নতুন ব্রিজ এলাকায় রাতে দু’টি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আমেরিকা প্রবাসী সাকিব চৌধুরী সোহান (১৭) নামে এক যুবক মারা যায়। একই দিনে কদুপুর এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় মোটর সাইকেলের ধাক্কায় হাওয়ারুন নেছা (৭০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন। ২ ডিসেম্বর রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের মশরিয়া মাদরাসার পাশে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায় ২ তরুণ। দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ১৯ অপরজনের ২১। সম্পর্কে তারা দুজন বন্ধু ছিলেন।
এছাড়া বড়লেখা পাখিয়ালা চৌমুহনী, তালিমপুর ও দাসেরবাজার এলাকা , কমলগঞ্জের চৈত্রঘাট ব্রীজ, হীড বাংলাদেশ ও মোকামবাজার ব্র্যাক অফিসের সামনে এবং কুলাউড়া আছুরিঘাটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবার পানিতে পড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে।
মোটরসাইকেলে নিহত সাকিন আহমদের মা জানান, আমার ছেলে খুবই শান্তশিষ্ট ও ভালো ব্যবহার ছিল। সে মাদরাসায় পড়াশুনা করেছে। দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সাকিন সবার বড় ছিলো। আমি কল্পনা করতে পারিনি আমার ছেলে এইভাবে মারা যাবে। যখন তার নিজের মোটরসাইকেল ছিল, তখন ইচ্ছামতো চালিয়েছে কোন এক্সিডেন্ট করেনি। মাগরিবের নামায শেষে সে তার বন্ধুর সাইকেলের পিছে বসা ছিলো। এমন সময় পিকআপের সাথে ধাক্কায় সে ও তার বন্ধু মারা যায়। আমার কলিজা খালি হয়েছে, মা জানে সন্তান হারানোর বেদনা কত কষ্টের। কোন মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।
এ ব্যাপারে মোটরসাইকেল চালক কাইয়ুম আহমেদ বলেন, অনভিজ্ঞতা ও বেপরোয়া গতিতে ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানো, হেলমেট ব্যবহারে উদাসীনতা, সড়কের বেহাল দশা কিছুটা দায়ী হলেও অসচেতনতাই সবচেয়ে বেশি দায়ী।এজন্যে সড়কে ট্রাফিক তদারকি বাড়াতে হবে। অভিভাবককেও সচেতন হতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন মৌলভীবাজার শাখার আহবায়ক শাহাব উদ্দীন জানান, অনেক মোটরসাইকেল চালকের লাইসেন্স নেই, তারা সড়কের সঠিক গতিবিধি ও নিয়ম কানুন জানে না। এতে নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদেরও ক্ষতি করে। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনকে অবগত করে থাকি, প্রশাসন শক্তভাবে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে যাবে।
বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) মুঃ হাবিবুর রহমান বলেন, হাইওয়ে বা লোকাল সড়কে যানবাহন কি গতিতে চলবে সে বিষয়ে সরকারি আইন রয়েছে। কিন্তু মোটরসাইকেল চালকের অসাবধানতা ও বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের জন্য এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্যে শুধু মোটরসাইকেল নয় প্রতিটি যানবাহনকে সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে হবে। আমরা সচেতনতা বাড়াতে সভা সমাবেশ করে যাচ্ছি।