পোকার আক্রমণে মারা যাচ্ছে কমলা গাছ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৮:১৯ অপরাহ্ণ
সবুজ কমলার জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কমলার বাগান। বাগানগুলোতে খাঁসি ও নাগপুরি জাতের আবাদ হয়। এই গুলোতে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। নতুন শত্রুর আক্রমণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জুড়ীর কমলা শিল্প। একাধারে মারা যাচ্ছে পুরাতন কমলা গাছ। পাশাপাশি নতুন চারাও বড় হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে। চতুর্মুখী আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৯৭.৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৯৫টি কমলা বাগান রয়েছে। তারমধ্যে উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে আছে ৬২ হেক্টর। বাগানগুলোতে অধিকাংশ কমলা খাঁসি ও নাগপুরি জাতের। যা খেতে অতি স্বুসাদু। এবছর কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৯৫ টন।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মোর্শেদ মিয়া জানান, তাঁর বাগানে প্রায় ১হাজার ৫শ’ কমলা গাছ ছিল। গত ৩ বছরে ৪শ’ গাছ মারা গিয়েছে। বাকি ৬শ’ গাছের মধ্যে প্রায় ২শ’ গাছ মারা যাওয়ার পথে।
তিনি জানান, প্রথমে একধরনের সাদা পোকা মাটির নিচে কমলার শিকড় থেকে পানি চুষে ফেলে, পরে উইপোকা শিকড় খেয়ে ফেলে। প্রথম বছর গাছের পাতা হালকা হলুদ হয়, দ্বিতীয় বছর পাতা পুরোপুরি হলুদ হয়ে যায় এবং পাতা ঝরা শুরু হয়, তৃতীয় বছর গাছটি মারা যায়।
মোর্শেদ মিয়া জানান, পোকার আক্রমণের শুরুতে কমলার আকার স্বাভাবিক থাকলেও দ্বিতীয় বছর আকার ছোট হয় এবং পরের বছর একেবারে ছোট হয়ে যায়।
লালছড়া এলাকার আরেক কমলা চাষী জয়নুল মিয়া জানান, বাগানে তার ৮০০শত কমলা গাছ ছিল। এই কয়েক বছরে ১০০শত কমলা গাছ মারা গেছে। প্রজাপতির মতো এক ধরণের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যায়।
তিনি জানান, পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঔষধে কাজ হচ্ছে না। ঔষধের কার্যকারিতা যত সময় থাকে তত সময় পোকার আক্রমণ বন্ধ থাকে। এরপর আবার যেই সেই।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: মাহমুদুল আলম খান বলেন, কমলা চাষীদের দেয়া তথ্য ভিত্তিতে সম্প্রতি আমাদের পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যা নির্ণয় করেছি। বাগানগুলো পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিছুটা বেশি। উইপোকা, মিলিবাগ, ফোমিং এর পর বিটল, গান্ধী প্রজাপতির (ফুট সাকার) মত পোকার আক্রমণ আছেই। আমরা চাষিদেরকে বেশ কিছু কীটনাশক সরবরাহ করেছি। এরমধ্যে কিছু কাজ করেছে এবং কিছু করে নাই। কৃষি গবেষণা থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল নিয়ে আসা দরকার, কারণ এখানে অপরিচিত কিছু মথ আছে যেগুলোকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা সে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাবলু সূত্রধর জানান, সম্প্রতি উপজেলা কৃষি অফিসারসহ আমরা কমলা বাগান পরিদর্শন করেছি। সমস্যাগুলো বিশ্লেষণসহ সুপারিশ আকারে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেব। যাতে করে কমলা চাষ আরও সমৃদ্ধ হয় এবং চাষিরা উপকৃত হন।