বিপ্লোত্তর সরকারও ফ্যাসিবাদের মত কসমেটিক উন্নয়নের ফানুস উড়ানোর চেষ্টা করছে- অলিউল্লাহ নোমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৪৭ অপরাহ্ণ
অলিউল্লাহ নোমান::
বিপ্লোত্তর সরকারও ফ্যাসিবাদের মত কসমেটিক উন্নয়নের ফানুস উড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রবাসী শ্রমিক বলে সম্বোধন করে জানান দিয়েছেন তাদের জন্য বিমানবন্দরে পৃথক লাউন্জ করা হয়েছে। আহা কি সুন্দর লোক দেখানো উন্নয়ন! ফ্যাসিবাদও এরকম উন্নয়নের বয়ান তৈরি করেছিল।
উপদেষ্টার জানা উচিত- প্রবাসে মানুষ শ্রম দেয় ঠিক আছে। পাশাপাশি অনেক ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিভিন্ন নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজ নিজ ক্ষেত্রে শ্রম ও মেধা ব্যয় করেন। আছেন বিভিন্ন পরযায়ের ব্যবসায়ী। সকলেই দেশের জন্য অবদান রাখছেন। বিশেষ করে রেমিটেন্স এর ক্ষেত্রে সকলের অবদান আছে। সুতরাং ঢালাওভাবে শ্রমিক বলাটা কতটা শুভনীয় সেটা আমি বুঝতে পারছি না। একজন উপদেষ্টা মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বললে ভাল হয়। সবাই মানুষ।
জুলাই-আগষ্টের আন্দোলনে প্রত্যেক প্রবাসী নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রেখেছেন। অনেকে দিনের পর দিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বিলাতে প্রতিদিন হাইকমিশন ঘেরাও করা হয়েছে। রেমিটেল্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন সকল প্রবাসী। এতে কিন্তু ফযাসিবাদ বড় ঝাকুনিতে পড়েছিল। এবার আসুন, উন্নয়ন বলতে কি বোঝায়।
আমি জানি প্রতিটি দেশে প্রবাসীরা বাংলাদেশ হাইকমিশন বা অ্যাম্বেসিতে পদে পদে হয়রানির শিকার হন। বিভিন্ন কাজে অ্যাম্বেসি/হাইকমিশনে যেতে হয়। তখন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেক প্রবাসীকে। হাইকমিশন/ অ্যাম্বেসিতে চাকুরিজীবীরা নিজেদের জমিদার মনে করেন। ঘুষ ছাড়া অনেকে কাজে হাত দিতে চান না।
যেমন,
(১) প্রবাসীরা পাসপোর্ট নবায়নে গেলে অনেক জঠিলতা মোকাবিলা করতে হয়।
(২) দেশে জমিজমা বিক্রি করতে বা অন্য কোন কাজে পাওয়ার অব অ্যাটরনি দিতে হলে অনেক রকম জঠিল শর্ত দেওয়া আছে। অনেকের ক্ষেত্রেই এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয় না। এতে মারাত্মক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় পাওয়ার অব অ্যাটরনি সংগ্রহ করতে। যেমন বিলাতে হাইকমিশনে পাওয়ার অব অ্যাটরনি করতে গেলে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট শর্ত লাগানো আছে। অনেকেরই এটা নেই। এক্ষেত্রে বৈধ বৃটিশ পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন দেখলেই চলবে, এমন ব্যবস্থা করা উচিত। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন প্রবাসে।
(৩) ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রবাসীদের জন্য সহজ ব্যবস্থা নেই। অথচ, অনেক ক্ষেত্রে এটা শর্ত করা হয়েছে। আগে সকল প্রবাসীকে সহজে ন্যাশনাল আইডি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হউক। সেটা না করেই শর্ত জুডে দেওয়া হয়েছে।
(৪) জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে চাকুরির জন্য যেতে অনেকে পদে পদে হয়রানির শিকার হন। যেমন মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সহজ ও কম টাকায় বিদেশ দক্ষ লোক পাঠানোর ব্যবস্থা আগে করা জরুরী।
এরকম অনেক বিষয় আছে যা অতি জরুরী প্রবাসীদের জন্য। কিন্ত সে গুলো জায়গামত বহাল রেখেই বিমান বন্দরে কসমেটিক লাউন্জ দিয়ে প্রবাসীদের কোন লাভ নেই। উন্নত বলতে বোঝায় সেবার মান বাড়ানো।প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার গুলো নিশ্চিত না করে, বিমানবন্দরে শুধু পৃথক লাউন্জ বানিয়ে লাভ নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।