এনডিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ এম. এ. করিম এর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী পালন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৪৫ অপরাহ্ণ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি::
প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আপসহীন, অকুতোভয়, দৃঢ়চেতা, সাহসী জননেতা এবং সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকার সম্পাদক ডাক্তার এম. এ. করিম-এঁর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের চৌমুহনা এলাকায় সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা এনডিএফ সহ-সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন। আলোচনা সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পদক অমলেশ শর্ম্মা, এনডিএফ নেতা তারেশ চন্দ্র দাস, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, কুলাউড়া হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া আহমেদ ও হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রবিরবাজার আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি জিলহজ্ব হোসাইন প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন ত্রিকালদর্শী রাজনীতিবিদ ডা. এম এ করিম এক জীবন্ত ইতিহাসের অগ্রসেনা ও ইতিহাসের কালপঞ্জী ছিলেন। প্রায় ৮ দশক জুড়ে ছিল তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সুদূর প্রসারী কর্মতৎপরতা ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি জগন্নাথ কলেজে ভিপি, পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ’৪৬-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, ’৫৪ নির্বাচনসহ সর্বত্রই তাঁর বিচরণ ছিল। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, ন্যাপ গঠন, যুবলীগ গঠন সর্বত্রই তিনি ছিলেন সরব। ১৯৬২ সালে বিনা পরোয়ানায় তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বিনা বিচারে ৫ মাস আটকে রাখা হয়। জেল জীবনের স্মৃতিকথা তিনি ‘ঢাকা সেন্ট্রাল জেল; নানান রঙের দিনগুলি’ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি এদেশের রাজনীতির ইতিহাসের অনেক অজানা কথা পাঠকদের সামনে নির্মোহভাবে তুলে ধরেছেন। বিশ্বপরিসরে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিতর্কেও তিনি সব সময় সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষাকারী সুবিধাবাদী ক্রশ্চেভ সংশোধনবাদ, তিন বিশ্ব তত্ত্ব ও মাওসেতু চিন্তাধারাসহ সকল প্রকার সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও দৃঢ়। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে অনেকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হলেও আদর্শ ও রাজনৈতিক প্রশ্নে তিনি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবী বিকল্পধারা প্রতিষ্ঠায় তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। এখানেই ছিলেন ডাঃ এম এ করিম অনন্য ব্যতিক্রম। গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় ডাঃ এম এ করিম অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি আজীবন অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গিয়েছেন। শ্রমিক দিনমজুর নিম্নবিত্তদের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। তিনি মওলানা ভাসানীরও একান্ত চিকিৎসক ছিলেন। এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তিনি সাম্রাজ্যবাদের মুনাফা লুটার বাজার হিসেবে দেখতেন। তাই তিনি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি হিসেবে বুঝতেন সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি তথা সকল প্রকার শোষণ-শাসনমুক্ত স্বাস্থ্য ও সমাজ ব্যবস্থাকে। আর তাই চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, আঞ্চলিক ও স্থানিক যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ব বাজার পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো যে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক তৎপরতা চালাচ্ছে তারই প্রতিফলন ঘটছে ইউক্রেনে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে। এই যুদ্ধের লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্ব গঠিত সামরিক জোট ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ নীতি মোকাবেলা করে রাশিয়ার স্বীয় লক্ষ্য হাসিল করা। অন্যদিকে তাইওয়ান স্বাধীনতার ইস্যু নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বৃহত সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের মুখোমুখি অবস্থান ও তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তাকে চীনের রেড লাইন ঘোষণা বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তেজনাকর করে তুলেছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশকে নিয়েও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। সাম্প্রতিক দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পিছনেও রয়েছে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান আরও অগ্রসর হয়। সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটলেও বিদ্যমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তাই বিদ্যমান নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী সমাজ কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে সাম্রাজ্যবাদের এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল বা এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদের দালাল ক্ষমতাসীন হলেও জনগণের কোন মৌলিক পরিবর্তন হবে না। তাই জননেতা ডা. এম এ করিমের দেখিয়ে দেওয়া পথে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বেগবান করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সামগ্রিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, যুদ্ধ উন্মদনার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জাতীয়-জনস্বার্থ বিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালালপুঁজি বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আমৃত্যু সংগ্রামী এই জননেতা ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ৯৮ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।