বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:২৮ অপরাহ্ণ

সরেজমিনে দেখা যায় ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তন তিনটি ইুনিয়ন পুরোপুরিভাবেই প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। বন্যার পানির সাথে আসা বালির স্তুপে ভরে গেছে ফসলের জমি।
কথা হয় ইসলামপুর গ্রামের টমেটো চাষি কুমেল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, দুইলক্ষ টাকা খরচ করে চারা লাগিয়েছিলাম। বন্যার জলে সব ডুবে মরে গেছে। নিস্ব হয়ে গেলাম। বন্যা সব নিয়ে গেলে। তার মতো একই অবস্থা দুই ইউনিয়নের কয়েকশে চাষির।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার ১২৭ হেক্টর আউশ, ৮২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর রোপাআমন, ৫ হাজার ১০৯ হেক্টর বিজতলা ও ৫৫০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৭২ হেক্টর আউশ জমি, ২৫ হাজার ৩৫৭ হেক্টর রোপাআমন, ১৫৬ হেক্টর বিজতলা ও ২৬৮ হেক্টর জমির শাকসবজি। শাকসবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা।
ইসলামপুর ইউনিয়নের আট গ্রামের শতাধিক চাষি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা বিক্রি করে সংসার চালান। আবার চাষও করেন। উৎপাদিত টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় উপজেলার ১০ গ্রামের ৩৫৪ চাষির প্রায় ৩২ লাখ টমেটোর চারা মাঠে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক চাষির ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় কৃষি গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, বনগাঁও গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয় গ্রাফটিং টমেটোর চারা। নার্সারি করে চারা উৎপাদন ও টমেটো চাষ গ্রামের মানুষের আয়ের বড় উৎস। বনগাঁওয়ের মতো উপজেলার অনেক গ্রামে বেগুনের চারার সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। টমেটো চাষে অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে। এ বছর ব্যাপক হারে চারা উৎপাদন ও ফলন হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় তাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শত শত চাষি নিঃস্ব হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে মাঠে ফেরার আর্থিক অবস্থা নেই কারও। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে করা টমেটো চাষ হারিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা।
বনগাঁও গ্রামের কৃষক রাশিদ মিয়া ও খালিক মিয়া জানিয়েছেন, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে ধারদেনা করে টমেটো চাষ করেছেন তারা। বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। এখন নিঃস্ব অবস্থায় আছেন তারা।
ইসলামপুরের কৃষক মোখলেছ মিয়া বলেন, গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে এ ধরনের বন্যা দেখিনি। এবারের বন্যায় জমির সব ফসল ভেসে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই বন্যায় আমাদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। আমার ৪০ হাজার চারা নষ্ট হয়েছে। এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হবে না।
একই এলাকার চাষি রোশন মিয়া বলেন, আমার ১৫০ শতাংশ জমিতে টমেটো আর নার্সারির ৪০ হাজার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কোনও টাকাও নেই যে, তা দিয়ে আবার চাষাবাদ করবো।
ওমর মিয়া বলেন, আড়াই লাখ টাকা খরচ করে টমেটোর নার্সারি করেছি। যাদের কাছে চারা বিক্রি করি, তাদের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছিলাম। বন্যায় সব ডুবে গেছে। আশা ছিল, ১৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু এখন মাঠ ফাঁকা। কীভাবে দেনা পরিশোধ করবো আর সংসার চালাবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, আকস্মিক বন্যার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষকরা। জেলার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চাষিদের বীজ প্রদানের জন্য তালিকা হচ্ছে। বীজদিয়ে আবার আবাদ করলে হয়তো ক্ষতিকিছুটা কমবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনা ও কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমরা।