উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাজ্যের কিছু আলেমের বিবৃতি
মাজারে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮:৩৫ অপরাহ্ণ
যুক্তরাজ্য সংবাদদাতা:
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুর করে যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের কিছু আলেম। তারা এ ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আজ শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্যের বৃহৎ ইসলামি মারকাজ সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ ও অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ হাফিজ মাওলানা সাব্বির আহমদসহ বেশ কিছু আলেম স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম এসেছে পীর-দরবেশ ও আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে। এতদঞ্চলের মানুষ তাদের অনুপম আদর্শ ও আচার-আচরণে আকৃষ্ট হয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। জীবিত অবস্থায় মানুষ যেমন তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন তেমনি ইন্তেকালের পরও তাদের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালবাসা রয়েছে। এদেশে সেই আধ্যাত্মিক মহাপুরুষদের শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মাজার রয়েছে। পীর-আউলিয়ার অনুসারী লাখো কোটি আশেক রয়েছেন। তারা মাজার জিয়ারত করেন ও ইসালে সাওয়াব পালন করেন। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ মাজারগুলো দর্শন ও জিয়ারত করেন। এটা এদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ধর্মীয় কালচারের অংশও বটে। কিন্তু সম্প্রতি একটি ধর্মীয় উগ্রবাদীগোষ্ঠী মাজারগুলো ধ্বংসের উদ্দেশ্যে হামলা-ভাঙচুর ও তান্ডবলীলা চালিয়েছে। এতে কিছু মানুষ আহতও হয়েছেন। যা আইনের চরম লঙ্গন। আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ করছি। আমরা মনে করি- এই উগ্রগোষ্ঠী মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের আড়ালে দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে গোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এরা কোন গোষ্ঠী ও বাহিনীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে কি না তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি- মাজার ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও তদন্তের মাধ্যমে ভাঙচুরকৃত মাজারগুলো পুণঃসংস্কারের।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, এখনো সারাবিশ্বে পীর- আউলিয়া ও সূফিয়ায়ে কেরামের অনুসারি ও সিলসিলার মানুষরা ইসলামের খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। কোন ধরনের সহিংসতা ও উগ্রতা ছাড়াই মানুষের মন জয় করে অমুসলিমদের দেশেও দ্বীনি তালিম-তারবিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ দিন দিন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। অথচ- বাংলাদেশের মতো ইসলামের উর্বর জমিতে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। আমরা এতে যারপর নাই বিস্মিত। আমরা মনে করি- সরকার যদি এই বিধ্বংসী কার্য্যকলাপ এখনই বন্ধের উদ্যোগ না নেয় তাহলে ছাত্রজনতার বিপ্লবের উদ্দেশ্য নস্যাৎ হবে। তাই দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে ও আইনের শাসন নিশ্চিতে প্রধান উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টাসহ সরকারে থাকা সকলকে এ ব্যাপারে দ্রুতত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী অন্যানের মধ্যে আছেন, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রির প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়্খ মাওলানা আবুল হাসান, শাহজালাল জামে মসজিদ, কভেন্ট্রির ইমাম ও খতিব মাওলানা হাফিজ মাওলানা মো. নূরুজ্জামান, শাহজালাল মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. বদরুল ইসলাম, আক্স ব্রিজ লন্ডন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা হাফিজ করিমুল ইসলাম, শাহজালাল একাডেমি, রচডেলের ইমাম হাফিজ দেলোওয়ার হাসান সুমন, সৈয়দ শাহ মোস্তফা জামে মসজিদ, আবাডিনের ইমাম হাফিজ মাওলানা রুহুল আমিন, সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদের ইমাম হাফিয মাওলানা শামসুল ইসলাম, হাফিয মাওলানা ওলিউর রহমান, মাওলানা আব্দুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।