আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আ’লীগের ইউপি চেয়ারম্যান নিহত, আহত শতাধিক
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ আগস্ট ২০২৪, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মধুর বাজারে দুইপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা (৫০) নিহত হয়েছেন। এঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। নিহত চেয়ারম্যান ছানা পাঁচগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে সংঘর্ষ শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহীনির সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর বাজারের মহেশ দাসের দোকান লুট করা হয়। এনিয়ে বাজারে উত্তেজনা ছিল। শুক্রবার সকালে মধুর বাজারে লুটকারীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান মিয়ার ভাই ছুনু মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের গ্রামের লোকজন জানলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রক্তা গ্রামের বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতানের নেতৃত্বে ও কেওলা গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান মিয়ার নেতৃত্বে মধুর বাজারে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছুড়ে। প্রথমে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান ছানা গুলি ছুড়েন। এসময় একপক্ষের পিন্টু সুলতান ও অপর পক্ষের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা গুলি ছুড়েছেন বলে স্থানীয়া জানিয়েছেন।
এসময় উভয় পক্ষে শতাধিক লোকজন গুলিবিদ্ধ ও ইটপাটকেলে আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় পাচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ছানাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ও রাজনগরের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহীনির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এদিকে চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- আতিক (১৮), মহেষ দাস (৬০), রুহিত দাস (২২), লিটন দাস (২৩), অজিত দাস (২৬), হিমাংশু দাস (২৫), সুমন দাশ (২৫), সঞ্জিত দাস (৪৫), তারা মিয়া (৪২), দুরুদ মিয়া (৩০), মোক্তার মিয়া (৫৮), শাহজাহান (৩২), আওলাদ হোসেন (৫০), ফয়ছল আহমদ (২৯), সুলতান (৩২), আফান মিয়া (৩৫), বিপ্লব দাস (২৮), শহীদ মিয়া (৫০), লোকমান (৩৫), লিপুন মিয়া (৩৫), আজমল আলী (৫৫), লায়েক (৩৫), জিকু (২৬), জিলু (২৮), ভুট্টু (২৫), সোহেল (২৫), পাভেল (২২), মিনত (৫৫), দিলাবত (৩০), ইয়াবর (৩৬), নুরুল আমিন (২৮), তারিস আহমদ (৬০), জিতু (৬০), এরশাদ (৬০), দুলু মিয়া (৫০), কুনাই মিয়া (৫৫), আলম মিয়া (২৬), হুসাইন (২০), ইসলাম মিয়া (২০), নুরুল ইসলাম (২০), মাহিদ (১৫), মিন্টু (১৬), নাঈম (১৮), সুহেল (২০) সহ উভয় পক্ষে প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের রাজনগর, মৌলভীবাজার ও সিলেট সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহীনির সদস্যরা অবস্থান করছে।
নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানার চাচাতো ভাই দেওয়ান মিয়া বলেন, আমার ভাইকে বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতান গুলি করে মেরে ফেলেছে। তারা আমাদের সব দোকান লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
অপর পক্ষের পিন্টু সুলতান বলেন, আমি আমার আইস ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় সারমপুর ও কেওলার লোকজন বাজারে হামলা চালায়। পরে আমরা তাদের প্রতিহত করি।
সেনাবাহীনির মৌলভীবাজার ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার হেলাল উদ্দিন বলেন, দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি। দাড়ালো অস্ত্র, ইটপাটকেল ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহীনি মোতায়েন রয়েছে।