রাজনগরের টেংরা-তারাপাশা সড়ক
বালির বুঝায় সড়ক নাজেহাল, দুর্ভোগে মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫:২০ অপরাহ্ণ

ওমর ফারুক নাঈম::
প্রতিনিয়ত হরহামেশাই সড়ক দিয়ে যাচ্ছে ভারি যানবাহন। বালু বোঝাই করা এসব ট্রাক লরির কারণে সড়কে হয়েছে বড় বড় গর্ত। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে তারাপাশা বালুমহালে আসা যাওয়া করা ভারি ট্রাক লরি চলাচলের কারণে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙা সড়কটির জন্য চরম দুর্ভোগে রয়েছেন দুই উপজেলার প্রায় ৫০হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামত না করায় সমস্যায় পড়ছেন এই দুই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। তাই অনতিবিলম্বে বালু মহালটি বন্ধ করে সড়ক নির্মাণ কাজ করার দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে থাকেন টেংরা-দেওয়ানদীঘি-তারাপাশা সড়ক। রাজনগর-কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। সড়কের করতল, সালন, হরিপাশা, কাচারি, তারাপাশা বাজারের মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্ত। যানবাহন চলাচলের সময় যানবাহনগুলো কাত হয়ে, হেলেদুলে কোনো রকম গর্তের স্থানগুলো অতিক্রম করছে। বৃষ্টি হলে গর্তগুলো পানিতে ভরপুর থাকে। তারাপাশা বাজারে সড়কের অবস্থা আরও শোচনীয়। সড়ক দিয়ে রাজনগর, মৌলভীবাজার, টেংরা, তারাপাশা, শমসেরনগর, পতনউষার, কাউকাপন, করাইয়া, মৌলভীচকসহ অসংখ্য ছোট-বড় স্ট্যান্ডের গাড়ি চলে। ভাঙা এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু বোঝাই করে চলাচল করছে ২০ থেকে ৩০টন ওজনের ভার লরি ও ট্রাক। ভারি যানবাহন চলাচল সড়কটি ভেঙে যাওয়ার একটা বড় কারণ। টেংরা থেকে তারাপাশা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার। এই অংশের টেংরা ইউনিয়নের করতল থেকে কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ, গর্ত তৈরি হয়েছে। ভাঙা সড়কের কারণে গাড়িচালকদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া চলাচলে যানচালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
সড়ক দিয়ে যাওয়া কুয়েত প্রবাসী এলাইছ মিয়া বলেন, এখন প্রবাস থেকে এসে এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। এই সড়কের এই দুর্দশা দেখে আমরা কষ্ট পাই। চালকরা অনেক কষ্ট করে দেখলাম এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। খুব দ্রুত যেন এই রাস্তা সংস্কার হয়। সিএনজি চালক আহমদ আলী বলেন, বালুর গাড়ি আসা যাওয়া করতে করতে এই রাস্তা ভেঙে গেছে। যে পরিমাণ গর্ত হয়েছে অনেক কষ্ট করে গাড়ি চালাতে হয়। বড় বড় গাড়ির ভারে এই রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গাড়ি চালক আতাউর বলেন, টেংরা থেকে তারাপাশা রাস্তার খুবই ভয়াবহ অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে দিনে ও রাতে খুব বেশী বড় বড় বালুর গাড়ি আসা যাওয়া করে।
বালু নিয়ে আসা ট্রাক চালক তারেক বলেন, রাতে ৫০ থেকে ৬০ টা বড় গাড়ি চলাচল করে। এসব বালি আমরা বিবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাই। রাস্তা ভেঙে গেলে আমাদের তো কিছু করার নেই। সিএনজি চালক মখলিছ বলেন, বড় বড় ডিস্ট্রিক ভরে বালি নিয়ে যায়। যার কারনে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। কেউ কোন কথা বলে না। ডেলিভারির রোগিরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচলই করতে পারে না। বালির লরি চালক রহিম মিয়া বলেন, নদীর ডাক তারা এনেছে। এখন তো এই নদীর বালু আমাদের নিয়ে যেতে হয়।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবছর নতুন করে মনু নদীর তারাপাশা বালুমহালটি আবার নতুনকরে ইজারা দেয়া হবে। বালুমহাল থেকে সরকার রাজস্ব আয় করবে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ও ভ্যাট, কর আদায় করবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, সড়কের একটি অংশ। দেওয়ানদীঘি-পালপুর সড়কের দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার। দেওয়ানদীঘি-পালপুর সড়কটি সংস্কারের জন্য টেন্ডার অনুমোদন হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

স্থানীয়দের দাবি নুরুল হক নামের ইজারাদারের কাছ থেকে তারাপাশা বালু মহাল থেকে সরকার বছরে মাত্র দেড় কোটি টাকা আদায় করছে। কিন্তু এই বালুমহালে আসা যাওয়া করা ভারি যানবাহনের কারণে ১২ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে সরকারের অর্থ ব্যয় হচ্ছে পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সরকারি ব্যয় ও জনদুর্ভোগ কমাতে বালুমহালটি বন্ধের দাবি জানান তারা।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, এটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। দীর্ঘদিন দরে ভাঙাচুরা থাকায় রাস্তাটিতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। তবে সুখবর এই রাস্তার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অতি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। রাস্তাটির লোড কেমন হবে এইট বিবেচনা করে অভিযানের মাধ্যমেও হোক কিংবা জনসচেতনতার মাধ্যমে হোক রাস্তাটি যাতে ভাল থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা নিব।
মৌলভীবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, রাস্তাটির টেন্ডার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে সংস্কার কাজে। এই রাস্তা দিয়ে ভারি বালু বোঝাই যানবাহন চলাচলের যে অভিযোগ আছে এব্যাপারে এলাকাবাসীকেই সোচ্চার হতে হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, বালুমহাল সরকারিভাবেই ইজারা দেয়া হয়ে থাকে। এই বালুমহালে ইজার প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো। হঠাৎ করেই বালুমহাল বন্ধ করা যাবে না। অভারলোডেড কোন ট্রাক যেন না যায়, সেটাও দেখা আমাদের দায়িত্ব আমরা দেখবো।