চাঁদা না পেয়ে শ্রীমঙ্গলে গৃহবধূকে পেটালেন কৃষকলীগ নেতা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৪, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
আহত রেবেকা সুলতানা ডলি বলেন, শিপলু ও তার ভাই আকলিছ আমার বাড়িতে এসে রড, লাঠি, ইট সহ দেশিয় অস্ত্র সস্ত্র হেলমেট দিয়ে আমাকে মারধর করেছে। রাস্তা লোকজনের সামনে ইট দিয়ে মেরেছে। এবং এও বলেছে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যসহ আমার বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। আমাকে বলেছে যদি এই বিষয়ে কোনও প্রকার মামলা মোকাদ্দমা করি তাহলে আমাকে ও আমার স্বামী সন্তাদেরকে প্রাণে হত্যা করবে। তাদের ভয়ে আমি পরিবার নিয়ে শঙ্কিত।
গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা বলেন, আমি যখনই আমার বাড়িতে কাজ শুরু করি তাদের সাথে কথা বলে চাঁদা না দেয়ায় কারণে শিপলুর নেতৃত্বে মুখোশ ধারী আইসা আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এখানে আমি একা। দুইটা মেয়ে নিয়ে থাকি। এখানে আমার জমি ১২ শতক। সরেজমিন আছে ৭.৮৬ শতক। বাকী জমি এর আশপাশে আছে। আর এস ম্যাপে আছে আমার জমির ওপরে রাস্তা। এখন উল্টো বলে আমি সরকারি জমি দখলে নিয়েছি। রেবেকা বলেন,শিপলু অত্যন্ত ভয়ংকর ও চতুর প্রকৃতির লোক । তার মা ভাইকে আমার কাছে প্রস্তাব দিয়ে পাঠায় ৫ লাখ টাকা দিলে ঝামেলা হবে না। বলেছে এথন ৫০ হাজার দিতে বাকিটা পরে দিতে। আমি বলেছি তার তো এখানে কোন জমি নেই। আমার বাড়ির পাশের লোকদের সাথে ঝামেলা নেই। তাহলে তার এতো মাথা ব্যাথা কেন?। আমরা তো কারো জমি দখল করছি না। আমাদের এখানে অপরাধ কি? কেন সে আমাদের সাথে লাগছে এর কারণ কি?। সরকারের রাস্তার জমি যদি থাকে তাহলে সরকার দেখবে? সে কেন আমার কাছে চাঁদা চাইবে। ভাঙচুর করবে। আমি একজন নারী মানুষের ওপর হাত তুলবে। মারধর করবে। ঘটনার পর ৯৯৯ কল করে পুলিশ কে আমি নিয়ে এসেছি পুলিশ কোন কাজ বন্ধ করেনি। ইউএনও সাহবেও আমাকে কোনো নোটিশ করেননি। পুলিশ আসার পরে কাজ শুরু করলে আবার ওরা কাজ বন্ধ করে দেয়।
রেবেকা সুলতানা স্বামী আমির হোসন বলেন, আমার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তিতে কয়েকবছর আগে বাড়িটি নির্মাণ করি। এরপর থেকেই একটি চক্র চাঁদা না দেয়ায় আমাদের পেছনে লেগে যায়। বলে- সরকারি রাস্তার জায়গা আমাদের বাড়িতে আছে। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ কেউ সার্ভে করে এর সত্যতা পাননি। এই বাহানা দিয়ে গত ১৪ মার্চ আমার স্ত্রীর কাছে শিপলু তার ভাই আকলিছ ও তার মাকে পাঠায় ৫০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য। এও বলে সর্বমোট মোট ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আর কোন ঝামেলা হবে না। আপাদত, এখন ৫০ হাজার দিতে। আমরা তাদের কথা মতো রাজি হইনি। এরপর শিপলুর নেতৃত্বে তারা আমার বাড়িতে ও আমার স্ত্রীর ওপর হামলা করেছে। আমরা এখন ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় আছি, এখন কখন কি হয় আমার ভীষণ শঙ্কার মধ্যে আছি। পুলিশের কাছে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু থানায় গিয়ে দেখি তারা আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ কে সিসিটিভির ফুঁটেজ দেখিয়েছি। কিভাবে আমাদের বাসায় আমার স্ত্রীর উপর হামলা করেছে। ঘটনার পর সরেজমিনে পুলিশকে নিয়ে এসে দেখিয়েছি। বলছে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমার গাইড ওয়ালের কাজ জোরপূর্বক বন্ধ রেখেছে ওই চক্রটি।
তিনি বলেন, এই বদরুল আলম শিপলু কখনো যুবলীগ, কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো কৃষকলীগ নেতা পরিচয় দেয়। এমপি তার মামা বলে এমপির সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তুলে সাধারণ মানুষের কাছে এমপি সাব তার ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করে বেড়ায়। সে দলীয় এ পরিচয়ে পুলিশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সে কখনো পরিচয় দেয় এমপি সাহেব তার মামা, সে কখনও পরিচয় দেয় যে আওয়ামীলীগের নেতা, কখনো যুবলীগের নেতা। আবার এখন পরিচয় দেয় কৃষকলীগ নেতা। এভাবে সে মানুষকে প্রতিনিয়ত পুলিশের ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও হয়রানি করে।
অভিযুক্ত কৃষকলীগ নেতা পরিচয়দানকারী বদরুল আলম শিপলু বলেন, এখানে চাঁদা বাদির কোন প্রশ্নই উঠে না। এলজিইডির রাস্তা দখলের অভিযোগ আছে ওই মহিলার বিরুদ্ধে। মহিলাকে কোন মারধর করা হয়নি। আমার গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে গেলে প্রতিবাদ করাটা কি অন্যায়।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বলেন, এখানে বাড়ির পেছনে সরকারি জমির খালে স্থাপনা নির্মাণের জন্য এলাকার মানুষের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরে ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়।