ছেলে ও ভাগনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে মন্ত্রীত্ব হারালেন শাহাব উদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
ছেলে ও ভাগনের বিতর্কিত কাজের কারণে এবার মন্ত্রীসভায় জায়গা হয়নি পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। এমনটাই মনে করেছেন তার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার-১ এর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষরা।
মো. শাহাব উদ্দিন গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৫ বছরজুড়েই নিজের নির্বাচনী এলাকায় জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। যার বেশিরভাগের পেছনেই নিজের ছেলে, খালাতো ভাই এবং ভাগনেরা জড়িত। বাবা মন্ত্রী হওয়ার পরই ছেলে জাকির হোসেন জুমন লন্ডন থেকে দেশে চলে আসেন। যদিও নিয়মিতই লন্ডনে আসা-যাওয়া করেন।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের বদলি, পদোন্নতি নিয়োগসহ সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করেন মন্ত্রীর ছেলে জাকির হোসেন জুমন। টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি এবং বদলির ব্যবস্থা করতে মন্ত্রণালয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। যেসব কর্মকর্তা টাকা দেন না, তাদের বদলি করা হয় অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকায়। এসব ক্ষেত্রে লেনদেন ঘটেছে মোটা অঙ্কের টাকা। বড়লেখা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন মন্ত্রীর বোনের ছেলে শোয়েব আহমেদ। যদিও এ নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার এবং মন্ত্রীর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় ঠিকাদারি কাজ করার বিধান না থাকলেও এখানে ব্যতিক্রম শোয়েব আহমেদ। এসব কাজ নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে নিলেও বছরের পর বছর ফেলে রাখেন। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভুক্তভোগীদের। বড়লেখা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালেহ আহমেদ জুয়েল। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান শোয়েব আহমেদের আপন ভাই। এই ইউনিয়নে দীর্ঘকাল ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন। গত নির্বাচনে উপজেলা থেকে মনোনয়নের তালিকায় এক নম্বরে নাম থাকলেও মন্ত্রীর সুপারিশে মনোনয়ন দেওয়া হয় তার ভাগনে সালেহ আহমেদকে। মন্ত্রীর খালাতো ভাই অহিদ ও তার ভাই আহমদ ফয়ছাল নাহিদের বিরুদ্ধে প্রায়ই হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তাদের নামে মামলাও হয়েছে। মো. শাহাব উদ্দিন মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বন ধ্বংস করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তার স্বজন এবং অনুসারীরা। অনেকে বন পুড়িয়েও দখলে নিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। আবার কেউ কেউ আইনের তোয়াক্কা না করে সাবাড় করছেন বনের গাছ। দেশের স্বর্ণ পাচারকারী চক্রের আলোচিত নাম সুলতান মিয়ার সঙ্গেও সখ্য ছিল শাহাব উদ্দিনের পরিবারের। এই চক্রের চোরাচালানের ধরা পড়া স্বর্ণ ফেরতের জন্য মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের টেলিফোন করেছিলেন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, যা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
জুড়ি উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল বলেন, পরিবেশ মন্ত্রীর পরিবারের রাজত্ব ছিল বড়লেখা ও জুড়ীতে। এবার তার কিছু অবসান হবে। মন্ত্রীর ছেলে ও ভাগনেরা যা খুশি তাই করতো।
বড়লেখার সুজানগরের বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, মন্ত্রীর লোকেরা এলাকায় অরাজকতা করতেন। যার ফলস্বরূপ এবার প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীত্ব দেননি। মন্ত্রীর নিজের পাপের কারণেই মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন।