আজাদের প্রচেষ্টায় ভারত ফিলেন ১৫ মাস ধরে কারাবন্দি রোহিদাস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ৬:১১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বেরিয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় নাগরিক রোহিদাস সরকার (১৮)। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আদালত তাঁকে ৩ -মাস ২০ দিন কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এ রায় ঘোষণার আগেই সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপরও ১৫ মাস ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন রোহিদাস। ফিরতে পারছেন না নিজ দেশে স্বজনদের কাছে। এগিয়ে এলেন মৌলভীবাজার আদালতের আইনজীবি সহকারী আজাদ মিয়া (২০) নামের বাংলাদেশি এক তরুণ।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতীয় সিমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের কাছে রোহিদাসকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ সরকার।
দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন আজাদ মিয়া। রোহিদাসের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ছুটে গেছেন ভারতেও। আজাদ মিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দক্ষিণ টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মৌলভীবাজার আদালতের এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কর্মরত। কারাগারে আটক থাকা রোহিদাস সরকার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাসহর থানার গোবিন্দপুর গ্রামের দুলাল সরকার ও প্রমীলা সরকার দম্পতির ছেলে।
আদালতের নথি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ জুন কুলাউড়ার কর্মধা সীমান্ত এলাকায় বিজিবির হাতে আটক হন রোহিদাস সরকার। এ ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালতের নির্দেশনায় রোহিদাসকে মৌলভীবাজারের কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালত তাঁকে ৩ মাস ২০ দিনের সাজার রায় দেন। তবে এর আগেই সাজার মেয়াদ পার হয়ে যায়। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ১৫ মাস ধরে মৌলভীবাজার কারাগারে থাকা ভারতীয় নাগরিক রোহিদাস সরকারকে (১৮) দ্রুত মুক্তি দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় প্রকাশ করা হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে যে দ্রুত মুক্তি দিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) কাছে এ রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর আইনজীবী বিভূতি তরফদার ভারতীয় তরুণ রোহিদাস সরকারকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন। একই সঙ্গে তাকে তার মায়ের কাছে ফেরিয়ে দিতেও নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বেঞ্চে শুনানি শেষে রোহিদাসকে দ্রুত ভারতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আজাদ মিয়া বলেন, স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে তিনি কারাগারে প্রায়ই কান্নাকাটি করেন, নিয়মিত খাবার খান না। পরে কারাগারে গিয়ে রোহিদাসের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা দেই। সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে মামলাসংক্রান্ত নথিপত্রের নকল সংগ্রহ করি। রোহিদাসের কাছ থেকে ভারতের স্বজনদের মুঠোফোনের নম্বর সংগ্রহ তাদের সঙ্গে কথা বলি। রোহিদাসের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আজাদ মিয়া ৫ ডিসেম্বর ভারতে যাই। তাদের মা-বাবার সকল কাগজপত্র এনে আদালত ও ভারতীয় হাই কমিশনে জমা দিয়ে আবেদন করি। রোহিদাস দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করে সংসার চালান। মা গৃহিণী। ছোট ভাই অর্জুন সরকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বেশ আগে। রোহিদাস অষ্টম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করেননি। বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন।
আজাদ মিয়া জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে রোহিদাস মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। এরপর আর ফেরেননি। পরে বিভিন্ন সূত্রে স্বজনেরা বাংলাদেশে তাঁর আটক হওয়ার খবর পান। তাঁকে নিয়ে স্বজনেরা উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। তাঁরা সন্তানকে ফিরে পেতে চান। অবশেষে সরকারের সহযোগীতায় আমরা তাকে তার বাড়িতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো: মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ভারতীয় নাগরিক রোহিদাস সরকারের সাজার মেয়াদ পার হওয়ার পর তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিজিবির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের অনুমতি নিতে বলা হয়। এরপর গত ২৯ নভেম্বর তারা লিখিতভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর সকল প্রক্রিয়া শেষে বিজিবির মাধ্যমে তাকে ভারতে প্রেরণ করা হয়।