শ্রীমঙ্গল ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিতরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি::
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পৌর ও কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির নানা পদে বিতর্কিতদের নিয়ে আনন্দ মিছিলকে ঘিরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহসান সুজাত ছুরিকাহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। সংঘর্ষে আরো ৭জন আহত হয়ে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরা হলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. সালাত মিয়া, সহ সভাপতি মো. নেছার আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মিয়া, পৌর জুবায়ের, নেছার ছাত্রলীগ কর্মী পাবেল, জুবায়ের আহমেদ ও মনসুর মিয়া।
বুধবার ১৮ অক্টোবর এসব অভিযোগ এনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. সালাত মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শিমুলসহ উপজেলা, পৌর ও সরকারী কলেজ কমিটির পদবীধারী ১২জন ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- বিলুপ্ত কমিটির দেড় বছর পর মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গত ১৬ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল উপজেলা পৌর ও কলেজ ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩ কমিটিতেই বিতর্কিত, নিষ্ক্রিয় ও অছাত্রদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ।
অছাত্র সাইদুর রহমান সুজাতকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কিশোরী অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। ২৯ বছরের বেশী বয়সে ছাত্রলীগে থাকতে পারবেন না- সংগঠনের এমন নিয়ম থাকলেও সাইদুর রহমান সুজাতের বর্তমান বয়স ৩৪। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী (জাতীয় পরিচয়পত্র নং: ৩৭১২৮২৯০৭০) তার জন্ম ৪ ফেব্রæয়ারি ১৯৯০। উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারী আকাশ রঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজীর অভিযোগ। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে তিনি বর্তমানে ঠিকাদারী পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। সহসভাপতি পদে স্থান পাওয়া হায়দার শাখাওয়াত সস্ত্রীক লন্ডন প্রবাসী। সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসানও দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। ২০১৯ সালে ৮ মে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে হবিগঞ্জ ডিবির হাতে আটক হয়েছেন বর্তমান উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আহমদ। আরেক যুগ্ম সম্পাদক মোহন মিয়া ও ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফারজানা সুমেল বিবাহিত আর উপ ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক সাহানা সুলতানা বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রতন দাশ দীর্ঘদিন ধরে ডেনমার্কে বসবাস করছেন, আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদবী পাওয়া জুবেল আহমেদ বিবাহিত। কলেজ শাখার সভাপতি আজিজুর রহমান নাঈম সক্রিয় রয়েছেন ঠিকাদারী ব্যবসায়। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মের্সাস আমির এন্টারপ্রাইজ। কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সায়ফুল ইসলাম সাইফ বিবাহিত আর সম্পাদক সাগর মিয়া বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে বলেও কেন্দ্রে পাঠানো পত্রে অভিযোগ করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকাশ রঞ্জন দেব মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য না। বর্তমানে সে ডিগ্রীতে পরীক্ষার্থী বলে জানান। তিনি বলেন, উপজেলা কমিটির সহসভাপতি, মো. সালাত, কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাইমুর রহমান নাঈম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম শিমুল, নাহিদ ও তাদের অনুসারীরা ককটেল, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এ হামলা করে। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠনে অনেকেই প্রার্থী হয়। জেলা যাদের যোগ্য মনে করেছে তারাই কমিটিতে স্থান পেয়েছে। যারা স্থান পায়নি তারা এসব ভূয়া তথ্য হাজির করে কমিটি বাতিলের দাবী করছে’। তিনি বলেন, ‘কমিটি কি ডিজিএফআই, এনএসআই এর রিপোর্ট ছাড়া হয়েছে নাকি?’
উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সালাত মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘আনন্দ মিছিলে আমরাও ছিলাম। এর মধ্যে উপজেলা সভাপতি সেক্রেটারিকে জানিয়েছি যে- এ আনন্দ মিছিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অতীতে যারা কর্মসূচী পালন করেছে এধরনের লোকও আমাদের কমিটিতে স্থান পেয়ে আনন্দ মিছিলে আসছে। এদের আমরা প্রতিরোধ করবো। এ কথা বলার পরপরই উপজেলা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি আমিসহ সাংগঠনিক সম্পাদক, জয়েন্ট সেক্রেটারি যারা ছিলাম তাদের উপর ক্ষেপে যায়। এরপর আমাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে’। সালাত বলেন, কমিটিতে বিবাহিত বিতর্কিত অনেকেই আছেন। তার মধ্যে ছাত্রদলের কর্মী পর্যন্ত রয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের ১ম সহসভাপতি আশরাফ চৌধুরী ফাহিম এর আগে ছাত্রদল করতো। তিনি বলেন আকাশ রঞ্জন দেব জুয়েল ও সুজাত কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের কারণে ভাল স্থান পেয়েছে। আর আমরা অর্থ দিতে না পারায় ভালো পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এর আগে আমাদেরকেও বলা হয়েছিল ‘ভালো একটা এমাউন্ট রেডি রাখো। যার যত এমাউন্ট ভালো হবে তার পদ তত উপরে দেয়া হবে’।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব আলম এর সাথে কথা বলতে বুধবার বিকালে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।