সর্বত্র সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যমত
শ্রীমঙ্গলে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা একমঞ্চে
প্রকাশিত হয়েছে : ২ আগস্ট ২০২৩, ৭:৩৮ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি::
রাজনৈতিক মাঠ যখন উৎত্তাপ্ত, সমাবেশ পাল্টা সমাবেশ এবং কেউ কাউকে ছাড় নায়ে মাঠ দখলের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত রাজনৈতিক নেতারা। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ওই রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে আওয়ামীলিগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এক মঞ্চে সর্বত্র সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এবং শ্রীমঙ্গল যে কোন ভাবে হোক সংহিংস মুক্ত রাখার কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে শ্রীমঙ্গল ইন হোটেলে ‘সর্বত্র সহিংসতার বিরুদ্ধে মানুষ’ শিরোনামে শ্রীমঙ্গলে শাস্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বহু দল ও মতের মানুষের সাথে পরামর্শ সভায় স্থানীয় নেতারা এসব কথা বলেন।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ ও ইউকে এইড এর সহযোগীতায় পিস ফ্যাসিলেটটরি গ্রæপ (পিএফজি) শ্রীমঙ্গলের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ এমপি।
পিএফজি শ্রীমঙ্গল উপদেষ্ঠা ও উপজেলা দুপ্রক সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ নেছার আহমদ এর সভাপতিত্বে ও পিএফজি কো-অর্ডিনেটর সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমেদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের কান্টি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার,সহকারী কমিশনার ভূমি সন্ধীপ কুমার তালুকদার ও অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার।
এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ বিট্রিশ হাইকমিশনের গর্ভনেন্স এন্ড পলিটিক্যাল টিম লিডার টিম ডুকেট, ঢাকার সিনিয়র গর্ভনেন্স এডভাইজার ম্যাথু কার্টার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব ভেবুল, সাধারণ সম্পাদক জগৎজ্যোতি ধর শুভ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তহিরুল হক মিলন, বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, সহ-সভাপতি শামিম আহমেদ, উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য হেলেনা চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাজী এলেমান কবির, জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি হাজী মাস্তান মিয়া, শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের ভাইস পেন্স্রিপাল রফি আহমেদ চৌধূরী, অধ্যাপক সুদর্শন শীল, প্রথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরপদার, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো.দুদু মিয়া, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিছলু আহমেদ, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, খাসি সম্প্রদায়ের নেতা মন্ত্রী জিডিশন প্রধান সুচিয়াং, আশীন্দ্রোন আনন্দমমী সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ বেণধর ভট্টাচার্র্য সহ বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি আব্দুস শহীদ এমপি তার বক্তব্যে বলেন, শ্রীমঙ্গলে সব দল ও মতের মানুষের সহাবস্থান দীর্ঘ দিনের। এখানে রাজনৈতিক কোন হানাহানি নেই। সবার সমান সুযোগ রয়েছে রাজনৈতিক চর্চা করার।
এক সভায় বসে তারা অঙ্গীকার করেন দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন অতীতের মত শ্রীমঙ্গলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে। বক্তরা বলেন,সহিংসতার পথে না গিয়ে সামনে মেনে চলবেন নির্বাচনী আচরণ বিধি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব ভেবুল বলেন, শ্রীমঙ্গল শন্তির, সস্প্রীতর শহর। বহুকাল থেকেই এখানে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ অবস্থান করছে। এখানে রাজনৈতিক হানাহনি নেই। আমরা সকলে সম্মিলিত ভাবে সহবস্থানে আছি।
বিএনপির সাবেক উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, শ্রীমঙ্গলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রয়েছে বর্তমান আওয়ামীলীগের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ এমপি ও পৌর সভার মেয়র মহসিন মিয়া মধু এর কারনে। চাঁদাবাজিসহ সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যমত থাকার কারনে এমন পরিবেশ হয়েছে বলে তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, শ্রীমঙ্গলে রাজনৈতিক দল,ধর্মীয় মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বজায় থাকলেও বর্তমান তরুন প্রজন্মে ফেইসবুকে নানা উস্কানীমূলক মন্তব্যের কারণে আগামী দিনে তাদের মধ্যে সেই সম্প্রীতি থাকবে কি না তিনি চিন্তিত। তিনি হাঙ্গার প্রজেক্টের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন,তারা তাদের সকল কর্মসূচী সচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে করার।
জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি হাজী মাস্তান মিয়া আক্ষেপের সুরে বলেন, জাতীয় পার্টি বিগত ১৫ বছর হতে আওয়ামীলীগের সাথে রয়েছে। কিন্তু তাদের থেকে শ্রীমঙ্গলে কোন মূল্যায়ন পাইনি। এভাবে যদি জাতীয় পার্টি চলে তাহলে সামনের দিনে জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব সংকটে পরতে পারে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় বিট্রিশ হাইকমিশন ঢাকার পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিম ডাকেট বলেন, ঢাকায় যখন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহিংসতা হচ্ছে, শ্রীমঙ্গলে সব দলের এই সহাবস্থান দেখে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন,গণতন্ত্রে পরম সহিষ্ণুতা মেনে চলতে হবে এবং সহিংসতাকে পরিহার করতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে বিকালে রাজঘাট চা বাগানের নাচঘরে স্থানীয় পঞ্চায়াত, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষদের সাথে মতবিনিময়ন করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও বৃট্রিশ হাই কমিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ।