তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিলেন মৌলভীবাজারের ৪ শতাধিক ইয়ুথ লিডার
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৩, ৮:২৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং (BPFHW) এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন তামাক প্রতিরোধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘ইয়ুথ লিডার্স কনফারেন্স, মৌলভীবাজার-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১১ মে বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার জেলার ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ শতাধিক ইয়ুথ লিডার অংশগ্রহন করে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং-এর সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি, বলেন, “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তরুন সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে এবং তাদের নিজ নিজ এলাকায় ধূমপান ও তামাক প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। তাছাড়া, বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই ধূমপান ও তামাক প্রতিরোধের লক্ষ্যে সচেতন হয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, “তামাক আমাদের দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তরুণ শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো পরিবার-পরিজনদের কাছে তুলে ধরে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তাছাড়া, গ্রাম, পাড়া, মহল্লার দোকানগুলোতে তামাক কোম্পানীগুলো যেন তরুণদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপন-প্রচারণা না করতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক এবং গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ার ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, “বিশ্বজুড়ে তামাকজনিত রোগে বছরে প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়, এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই মারা যায় প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ। তাছাড়া, বাংলাদেশের প্রায় ৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৩-১৫ বছরের মধ্যে) কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যবহার করে, এবং ৫৯% মানুষ পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। সুতরাং, কিশোর কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য অর্জনে ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান মাসুদ বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো আকর্ষনীয় প্রচার-প্রচারণা, প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজন, এবং কমদামে বিড়ি/সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে তরুণ ও যুবসমাজকে টার্গেট করছে। শুধু তাই নয় অন্যের ধুমপানের কারনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় অগণিত নারী ও শিশু। তার চেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ নেশাগ্রস্থ মানুষ প্রথমে বিড়ি/সিগারেট সেবন করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়। তাই শিক্ষার্থীদের ধূমপান ও তামাকমুক্ত পরিবেশে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশে-পাশে তামাকপণ্য বিক্রি ও প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে।”
কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ধূমপান ও তামাক প্রতিরোধের লক্ষ্যে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারনা কৌশল শিশু-কিশোরদের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে, যা পরবর্তীতে অন্যান্য নেশায় আসক্ত করে। তাই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সকল স্তরের মানুষ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিবৃন্দের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণের বিষয়টিও অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়।
মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, শ্রীমঙ্গলের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীলিপ কুমার বর্ধন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল সহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।