মাসিক বেতনের সমপরিমান ঈদ বোনাসের দাবিতে মৌলভীবাজারে হোটেল শ্রমিকদের বিক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ৩:১৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
আসন্ন ঈদুল ফিতরে এক মাসের বেতনের সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদানের দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় হতে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি চৌমুহনা, কোর্টরোড, সেন্ট্রাল রোড ঘুরে পুণরায় কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়। পরে কার্যালয়ে জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে এক শ্রমিকসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ জামাল মিয়া, দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হোটেল শ্রমিকনেতা আল আমিন, চিন্টু কর।
সভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে, কিন্তু বাড়ছে না সাধারণ মানুষে আয়। তার উপর দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে। সরকার মুখে শ্রমিকবান্ধব, কৃষকবান্ধব বললেও কার্যত সরকারের ভূমিকা শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থের পরিপন্থি। কৃষিমন্ত্রীর সারের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতির এক সপ্তারের মধ্যে সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সকল ধরনের সারের মূল্য কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অতীতের চেয়ে বর্তমানে সারের মূল্য কমেছে। ‘মূল্য সমন্বয়’এর কথা বলে প্রতিবারই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। কিন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিতেলের মূল্য কমলেও দেশে মূল্য কমানো হয়নি। এরকম অবস্থায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন কি হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত করা হয়। কারণ ঈদের সময় অধিকাংশ হোটেল-রেস্টেুরেন্টের শ্রমিকদের উৎসব বোনাস প্রদান করা হয় না। অথচ শ্রমিকদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর খাটুনিতে সৃষ্ঠ মুনাফায় মালিকশ্রেণি মহাধুমধামে ঈদ উদযাপন করেন। দেশের প্রচিলত শ্রমআইন মোতাবেক উৎসব বোনাস শ্রমিকের আইনগত ন্যায্য অধিকার। এমন কি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত করা অমানবিক। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি ও উৎসব বোনাস প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সভা থেকে আসন্ন ঈদুল ফিতরে সকল হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মাসিক বেতনের সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান, অবিলম্বে হোটেল সেক্টরে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে বাজারদরের দরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি ঘোষণা, মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে বেতনসহ ছুটি প্রদান, শ্রমিকদের ধর্মঘট করার আইনগত অধিকার হরণের লক্ষ্যে প্রণিত ‘অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩’ প্রত্যাহার, আইএমএফ’র শর্ত মেনে ভতুর্কি প্রত্যাহার করে দফায় দফায় গ্যাস-বিদুত-জ্বালানিতেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করা, শ্রমিকদের জন্য নিত্যপণ্যে সর্বাত্মক রেশনিং চালুর দাবি করা হয়।