প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো চা জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৬:০০ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো চা জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শমসেরনগর চা বাগান ফুটবল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিনব্যাপী নানান আয়োজনে চা জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসব সমন্বয়কারী মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীনের সভাপতিত্বে চা শ্রমিক যুবনেতা মোহন রবি দাশের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুর রহমান।
এতে ভারত, নেপাল ও নাইজেরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা-সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক, প্রতিনিধিসহ দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ ভাষা ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠির ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
আয়োজকরা জানান, দেশে ১৬৭ চা বাগানে প্রায় ১০৫টি জনগোষ্ঠীর বসবাস৷ তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। এসব জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষে এমন আয়োজন করেছেন তারা।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, রাজনগর, বড়লেখাসহ ৭টি উপজেলায় ৯২টি চা বাগানে প্রায় অর্ধশতাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে মুন্ডা, সাঁওতাল, ওঁড়াও, মাহালি, সবর, পাসি, রবিদাস, হাজরা, নায়েক, বাউরি, তেলেগু, তাঁতি, কৈরী, দেশওয়ারা, বর্মা, কানু, পানিকা, কুর্মী, চাষা, অলমিক, মোদি, তেলি, পাত্র, মাঝি, রাজবংশী, মোদক, বাড়াইক, ভূমিজসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করেন।
দেওরাছড়া চা বাগান বাসিন্দা নিমাই মুন্ডার বলেন, আমরা যারা বৃদ্ধ তাদের কয়েকজন নিজেদের ভাষা জানি। তাও নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ছেলে-মেয়েরা এখন মুন্ডা ভাষা শিখতে চায় না। পরিবারে থাকলে দু’একটি কথা বলে। কিন্তু বাইরে বের হলে নিজেদের ভাষার চর্চা হয়না।
চা শ্রমিক সন্তান রামভজন কৈরী বলেন, আমাদের নিজেদের ভাষা সম্পর্কে কিছু জানি না। বাপ-দাদার আমল থেকে এই ভাষার ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ভাষা আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
শমশেরনগর ইউপি সদস্য মো. ইয়াকুব মিয়া বলেন, চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাগুলো আজ মৃতপ্রায়। নিজ মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য রফিক-জব্বার-সালাম-বরকত নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে গেছেন। অপরদিকে আমরা নিজেরাই অতি আধুনিকতার ছোঁয়া গায়ে লাগাতে চা বাগানের নিজ মাতৃভাষা গুলোকে গলাটিপে হত্যা করছি প্রতিনিয়তই। তাই চা বাগানের এই বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা গুলোকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন চা বাগানের ভাষা-সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী চা শ্রমিকদের মূল স্রোতের সাথে যুক্ত করতে চা বাগানে সংস্কৃতি একাডেমী প্রতিষ্ঠা জরুরী৷ এতে চা জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের হবে।
এদিকে দিনব্যাপী আয়োজনে বিভিন্ন চা বাগানের প্রতিনিধিরা- হাড়িনৃত্য, টুশুগান, সহরগান, চড়াইয়ানৃত্য, ঝুমুরনৃত্য, লাটিখেলা, ভজনা, হোলীগীতসহ নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপনা করেন। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন চা বাগান থেকে কয়েক হাজার চা শ্রমিক যোগ দেন।