লাউয়াছড়ায় ট্রেন থামিয়ে হরিণ জবাই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি মায়া হরিণের জবাই করা দেহ ঢাকাগামী কালনি ট্রেন থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশ।
হরিণটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং হরিনটি জবাই করা এবং বনবিভাগ ও রেলওয়ে পুলিশের দাবি এটি মায়া হরিণ এবং একমাত্র এই এলাকায় লাউয়াছড়া বনেই এই হরিণ আছে। হরিণটি কিভাবে চলন্ত ট্রেনে আসল নিয়ে নানামুখি প্রশ্ন দেখা দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কালনি ট্রেনের চালক লাউয়াছড়া বনের ভেতর ট্রেন থামিয়ে হরিণটি জবাই করেন। এবং সেই সময় কোন অনুমোতি ছাড়া তিনি ৬ মিনিট হরিন জবাই করার জন্য ট্রেনটি লাউয়াছড়া বনের ভেতর দাড় করিয়ে রাখেন। এই ট্রেনের একাধিক যাত্রী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ট্রেনের যাত্রী ছিলেন সন্তুশ দাস, তিনি কুলাউড়া থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে ট্রেনে উঠেন।
তিনি জানান, লাউয়াছড়া ডুকার কিছুক্ষণ পর আমি ওয়াসরুমে যাই, তো হঠাৎ করে দেখি ট্রেন থেমে গেছে। আমি সাথে সাথে বের হই, তারপরে শুনি যে একটা হরিণের জন্য ট্রেন থেমেছে। কেউ বলতাছে শিকারী রা হরিণ কে ফায়ার করছে,হরিণ দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে পড়ছে, আবার কেউ বলতাছিল বন বিভাগের লোকজন সাথে ছিল। পরে দেখলাম হরিণ আহত হইছে, এর জন্য জাবাই করছে। জবাই অবস্থায় নিয়া আসতে দেখছি। অনেকে ভিডিও করছে। এর পর ট্রেন ছেড়ে দেয়।
সেদিনের কয়েকটি ছবি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে, সেই ছবিতে দেখা যায় দাড়িওয়ালা এক ব্যাক্তির হাতে জবাই করার অস্থ্র । তবে তিনি চালক নিজেই কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি তবে অনেক মাধ্যমে চালক বলে দাবী করা হয়েছে।
এই ট্রেনের আরেক যাত্রী কমলগঞ্জের সুমন আহমদ জানান, ট্রেনটি লাউয়াছড়া বনের ভেতর আসতেই থেমে যায় এবং ৬/৭ মিনিট পর একটি হরিন নিয়ে এসে আবার ট্রেন ছাড়ে।
সেদিন ট্রেনটি লেইট করে পৌছায় স্টেশনে। ভানুগাছ রেওলয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার তার রেকর্ড বুক থেকে জানান ভানুগাছ থেকে ৮.২৮ এ ট্রেনটি ছেড়ে আসে এবং ৮.৫৪ তে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌছায়/ সাধারণ সময়ে ২০ মিনিট লাগলেও এই দিন লাগে ২৬ মিনিট।
এই দিকে বনবিভাগ সুত্রে জানা যায়, ট্রেন না থামিয়ে কোন ভাবেই ট্রেনে তুলার কথা না। এই হরিণের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ট্রেনের গায়ে লেগে হরিনটি আহত হয় পরে জবাই করে ট্রেনে তুলা হয়। বনবিভাগের একাদিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শতভাগ ধারণা যে চালক ট্রেন থামিয়েছেন এবং জবাই করে তা ট্রেনে তুলা হয়। কারণ ট্রেন না থামালে তা কোন ভাবেই ট্রেনে তুলা সম্ভব নয়। এই মায়া হরিণ লাউয়াছড়া বনেই সাধারনত দেখা যায় এবং অতিথেও ট্রেনের ধাক্কায় হরিন আহত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ময়নাতদন্তে জানা যায় হরিনটি জবাই করে হত্যা করা হয়েছে যদিও এর গায়ে আরও আঘাত ছিল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, আমরা পোস্ট মর্টেম করে বুঝতে পেরেছি প্রাণীটিকে ধারলো কোন জিনিস দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, ঢাকাগামী কালনি ট্রেন থেকে হরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে তারা আমাদের জানায়। আমার ধারণা চলন্ত রেলের আঘাতে হরিণটি আহত হয় এবং পরে তারা জবাই করা হয়।
আমরা পোস্ট মোর্টেম করে জানতে পেরেছি জবাই করার কারণেই তার মৃত্য হয়। গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও তার কারণে মৃত্য হয়নি। জবাই না করলে এই আঘাতে সুস্থ হয়ে যেত।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, আমার ধারণা ট্রেনের আঘাতে আহত হয় এবং পরে তা ট্রেনে তুলা হয় । কিভাবে তুলা হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না ।
কালনির ট্রেনের সেই চালকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক বার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি চালক মোবাইল নাম্বার দিতে পারেন নি । বিষয়টি নানা ভাবে এড়িয়ে যান।
তবে এই বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে বনবিভাগ বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে রেলওয়ে পুলিশ।
রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, এখানে অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছেনা তদন্ত ছাড়া। তবে হরিণটি লাউয়াছড়ার এবং সেখান থেকেই ট্রেনে উঠানো হয়েছে।