হাসিম মিয়ার লাগানো শতাধিক তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে এখনো
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:২৩ অপরাহ্ণ
সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুরা ও একাটুনা ইউনিয়নের রায়পুর, জগৎপুর, কচুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়। রাস্তার দুইপাশে সাড়ি সাড়ি তালগাছ। প্রায় বিশ কিলোমিটার সড়কজুড়েই দাড়িয়ে আছে তালগাছগুলো। কোথাও একলা, কোথাও সারি বাঁধা নানা উচ্চতার তালের গাছ। বড় গাছের কোনোটিতে তাল ধরছে। সেসব গাছ থেকে অনেকেই বিক্রির জন্য কচি অবস্থাতেই তালের শাঁস কেটে নিয়ে যান। পাকা তাল কুড়িয়ে নেন আশপাশের লোকজন। আবার কাছাকাছি সময়ের গাছও আছে। যেগুলো মাত্র কয়েক বছরের। ৪-৫ ফুট উচ্চতায় পাতা ছড়িয়ে মাথা তুলছে আকাশের দিকে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসিম মিয়া কৃষিকাজ করতেন। তাই নিয়েই ছিল তাঁর ব্যস্ততা। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে সেই তারুণ্যের সময় প্রায় ৫০ বছর আগে নিজের অন্তর্গত তাড়না থেকে শুরু করেন এলাকার একাটুনা-নতুন ব্রিজ সড়কের দুই পাশসহ বিভিন্ন স্থানে তালের বীজ রোপণ করা। ভাদ্র মাসে তাল পাকার সময় ছালার ব্যাগে করে তালবীজ নিয়ে বের হতেন। সঙ্গে থাকত মাটি খোঁড়ার যন্ত্র। অনেকেই কৌতূহল নিয়ে দেখতেন। তাতে হাসিম মিয়ার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তিনি নীরবে নিজের মতো সড়কের দুপাশের ফাঁকা স্থানে বীজ রোপণ করে দিতেন। বর্তমানে এই তালগাছের সংখ্যা প্রায় একশত এর বেশী।
স্থানীয় ইটা ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থার সহ-সভাপতি রাজন আহমদ বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি তিনি ব্যাগের মধ্যে তালের বীজ নিয়ে হাঁটতেন। বিভিন্ন স্থানে তালের বীজ রোপণ করতেন। আমি যখন মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতাম। সেই সময়ও তালের বীজ রোপণ করতে দেখেছি। এখন এই সড়কের দুই পাশে যে শতাধিক তালগাছ আছে, তা হাসিম মিয়ার লাগানো। কিছু কিছু গাছ মানুষের অসচেতনতার কারণে নষ্ট হয়েছে। তবে বেঁচে যাওয়া গাছের সংখ্যাও শতাধিক।
হাসিমের স্ত্রী সুরমা বেগম জানান, তাদের বিয়ের আগে থেকেই হাসিম মিয়া তালবীজ রোপণ শুরু করেছেন। এটা শুরু হয়েছিল হাসিম মিয়ার মামার বাড়ি থেকে। মামার বাড়িতে অনেকগুলো তালগাছ ছিল। ভাদ্র মাসে তাল পাকলে সেখান থেকে তিনি তালের বীজ নিয়ে আসতেন। একাটুনা বাজারে ব্যাংকের কাজ, কেনাকাটাসহ নানা কাজে যেতেন। যাওয়ার সময় ব্যাগে করে তালবীজ নিয়ে যেতেন।
গাছপালার প্রতি তাঁর আলাদা মায়া-মমতা। অসুস্থ হাসিম মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কেঁদে ফেলেন। বাধ্যক্যের কারণে কথা বলতে পারেন না। তালগাছগুলোর ছবি দেখতেই তিনি অজুড়ে কেঁদে ফেলেন।