অবৈধ শ্যালোর দাপটে বাসা-বাড়িতে পানি সংকট!
প্রকাশিত হয়েছে : ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় অবৈধ প্রায় ছয় শতাধিক শ্যালো পাম্পের মাধ্যমে বোরো ধানে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ থেকে লাইসেন্স নিয়ে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দেয়ার কথা আইনে থাকলেও কোথাও মানা হচ্ছে না তা।
শমশেরনগর ও হাজীপুর ইউনিয়ন পাশাপাশি তিন গ্রামে অর্ধশত শ্যালো ও ডিপ টিউবয়েলের (গভীর নলকূপ) মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে বোরো ক্ষেতে সেচবাণিজ্য চলছে। এতে দ্রুত নিচে নামছে পানির স্তর। ফলে বসতবাড়ির নলকূপগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বোরো সেচের জন্য এ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলায় ১১০টি শ্যালো মেশিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শমশেরনগর ইউনিয়নে অনুমোদনকৃত শ্যালো খুবই কম রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শমশেরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ সতিঝিরগ্রাম, মরাজানের পার, হাজীনগর ও হাজীপুরের বিলেরপার গ্রামসহ আশপাশ গ্রামসমূহে অসংখ্য শ্যালো ও ডিপ টিউবওয়েল (নলকূপ) বসানো হয়েছে। দু-এক কিলোমিটারের মধ্যেই এসব নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের মাধ্যমে বোরো ক্ষেতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এগুলোতে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দিয়ে চলছে সেচবাণিজ্য। মাটির ৭০ থেকে ২০০ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলনের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীরা কৃষকরা জানান, শ্যালো নলকূপের মালিকরা নিজেদের জমির পাশাপাশি কিয়ার প্রতি পনের শ’ টাকা হারে সেচ প্রদান করছেন। চার গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্যালো ও ডিপ টিউবওয়েলে ভূ-গর্ভ থেকে প্রতিনিয়ত পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। ফলে বসতবাড়ির নলকূপগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দেওয়ায় অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ছে।
দক্ষিণ সতিঝির গ্রামের রকিব মিয়া, জসিম উদ্দীন, নান্টু দেবনাথ, ননী গোপাল শর্মা, আসমত মিয়া, মরাজানের পার গ্রামের সুহেল মিয়া, বিলেরপার গ্রামের মিনার আহমদসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি এসব ডিপ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে টাকার বিনিময়ে এই সেচ প্রদান করছেন। তাদের অনেকেই বিঘাপ্রতি ১৫শ’ টাকা হারে সেচ দিচ্ছেন। এ কারণে অনেক বসতবাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
রুশনা বেগম, সালমা বেগম, রাজু মিয়া, আজাদ মিয়া, আব্দুল খালিক বলেন, ডিপ ছাড়লেই টিউবয়েলে পানি সংকট দেখা দেয়। অনেক চাপাচাপির পর কিছু পানি উঠে। অনেকের নলকূপে কোনো পানিই উঠছে না। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে খাবার পানি ও গোসলের পানির জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। কৃষি বিভাগ এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শমশেরনগরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুর রহমান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরেই ডিপ ও শ্যালো বসানো হয়েছে। তাদের এসব বিষয়ে আপত্তি জানানোর পরও কেউ কথা শুনতে রাজি না।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, সেচ ব্যবহারে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইনে প্রত্যেক উপজেলায় নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপজেলা সেচ কমিটি নামে একটি কমিটি রয়েছে। উপজেলা পরিষদ কর্তৃক লাইসেন্স ব্যতিত কৃষি কাজের জন্য কোনো স্থানে নলকূপ স্থাপন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যে স্থানে নলকূপ স্থাপন করা হবে সেই স্থানের পানি ধারক স্তরের অবস্থা; নিকটবর্তী বিদ্যমান নলকূপের দূরত্ব, নলকূপ দ্বারা উপকৃত হবে এরূপ সম্ভাব্য এলাকা গৃহস্থালির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত নলকূপসহ বিদ্যমান নলকূপের উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিরূপণের মাধ্যমে যাদের লাইসেন্স প্রদান করা হবে তারাই শুধু ডিপ কিংবা শ্যালো মেশিন স্থাপন করতে পারবেন। অথচ এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে হারে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন হচ্ছে তাতে পানির স্তর নিচে নামারই কথা। এটি পরিবেশের জন্য চরম হুমকি। এগুলো এখনই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশাসনের বন্ধ করা উচিত।
অভিযোগ বিষয়ে দক্ষিণ সতিঝির গ্রামের ডিপ টিউবয়েলের মালিক রকিব মিয়া বলেন, ‘মাটির দুশো ফুট নিচে থেকে পানি তুলে আমার ডিপ টিউবয়েল দিয়ে চাষাবাদ করছি। নিজের কিছু জমি ছাড়াও কয়েকজনের জমিতে সেচ দেয়া হয়। উপজেলা থেকে কোন লাইসেন্স নেই। কৃষি মিটারের জন্য আবেদন করেছি। কৃষি অফিসের ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাদের ক্ষেতকৃষি ও সেচ দেওয়ার বিষয়টি জানেন।’
উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘শ্যালো মেশিনগুলোর বিষয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করা হবে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘সেচ কাজের জন্য অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়ে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দীন বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’